জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে প্রবাসীদের আধিক্য কমেছে

নির্বাচন

সুনামগঞ্জের প্রবাসী–অধ্যুষিত জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের আধিক্য কমছে। করোনা পরিস্থিতি ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ ও নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁদের সরব উপস্থিতি কমে গেছে।

পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রবাসী–অধ্যুষিত এই উপজেলায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন মানেই প্রবাসীদের অংশগ্রহণ। একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় এখনো নয়জন জনপ্রতিনিধির আটজন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।

পৌরসভার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পৌর নির্বাচনে প্রবাসীদের আধিক্য দেখা দেয়। মেয়র পদে প্রবাসী প্রার্থীর পাশাপাশি সব কটি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক প্রবাসী দেশে আসতেন। তাঁদের প্রচারণায় সরব থাকত পৌরসভা। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রবাসীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এ ছাড়া দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রবাসী প্রার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।

১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আবদুল মুকিতকে পৌর প্রশাসক নিয়োগ করে পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০০ সালে প্রথম পৌর নির্বাচনে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ হিরণ মিয়া পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এক মাসের মধ্যে তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আবদুল মনাফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে আবারও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আবদুল মনাফ মেয়র হন।

গত বছরের ১১ জানুয়ারি আবদুল মনাফ মারা যান। ১০ অক্টোবর মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী অংশ নেন। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া মেয়র নির্বাচিত হন। দেড় মাসের ব্যবধানে মেয়াদপূর্তিতে ১৬ জানুয়ারি আবারও পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার ৫ জন মেয়রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মধ্যে মাত্র দুজন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী।

জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, জগন্নাথপুর পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রবাসী বলে ভালো অবস্থানে থাকতেন। এবার সেটা নেই। প্রবাসী প্রার্থীদের সমর্থনে তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা দেশে এসে প্রচারণায় নামতেন। নির্বাচনী প্রচারণায় কালোটাকার খেলাও জমে উঠত। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার প্রবাসীরা আসতে পারছেন না। নেই টাকার খেলা।

জগন্নাথপুর পৌর শহরের ইকড়ছই এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীরা পরিবারিক, সামাজিক ও মানবিক কাজে ভূমিকা রাখেন। তাই নির্বাচনে তাঁদের প্রভাব থাকে। নির্বাচনকে একটা উৎসব হিসেবে দেখে প্রবাসীরা দল বেঁধে দেশে আসতেন। এবার করোনার কারণে প্রবাসীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নেই।

আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, করোনা না হলে তাঁর ভাই, বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন দেশে এসে প্রচারণা চালাতেন। যুক্তরাজ্যে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে তাঁরা কেউ এবার আসতে পারছেন না।

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আমজদ আলী শফিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অনেক নিকট আত্মীয় নির্বাচন করছেন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসতে পারছি না।’

জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ইসহাকপুর গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আকমল খান বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলে আমিসহ আরও কয়েকজন প্রবাসী পৌর নির্বাচনে অংশ নিতাম।’

হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা আবদুল মতিন বলেন, ‘জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছিলাম। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচন থেকে বিরত আছি।’