জগন্নাথপুরে তরুণীকে ধর্ষণ ও তাঁর বাবাকে মারধর মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

পুলিশ ও ডিবির যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার শামীম আহমেদ (মাঝে গোলাপী গেঞ্জি পরিহিত)
সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে একবার আটকে রেখে ধর্ষণ করা তরুণীকে (২৭) আবার খুঁজতে এসে না পেয়ে বাবাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শামীম আহমেদকে (৩০) গ্রেপ্তার হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে থানা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যৌথ অভিযানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতেয়ার উদ্দিন চৌধুরী গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত সোমবার রাতে ঘটনার পর থেকেই শামীম আহমদকে গ্রেপ্তার করতে আমরা জোর তৎপরতা চালাই। ঘটনার পরপরই এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আজ প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি বেশ লম্বা। এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত তাঁর। সর্বশেষ এক তরুণীকে একবার আটকে রেখে ধর্ষণ করে পরে তাঁকে বাড়িতে দলবল নিয়ে আবার খুঁজতে যান। এ সময় তরুণীকে না পেয়ে তাঁর ৬৫ বছর বয়সী বাবাকে রড দিয়ে পেটায় শামীম বাহিনী। ওই বৃদ্ধ (তরুণীর বাবা) তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছেন, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পরই শামীমকে ধরতে পুলিশ তৎপর হয়। পাশাপাশি পুলিশ গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন রাত পৌনে ১০টার দিকে ওই তরুণী বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন।

ভিডিওতে করা অভিযোগের পাশাপাশি মেয়েটির বাবা এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, শামীমের অত্যাচারে মেয়েকে নিয়ে তিনি অনেক দিন ধরে বেকায়দায় আছেন। বিষয়টি তিনি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনারও বিচার পাননি তিনি। লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েটি এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে। সোমবার রাতে মেয়েকে না পেয়ে শামীম ও তাঁর লোকজন তাঁকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান।

বিয়ের পর দাম্পত্য বিরোধের কারণে ওই তরুণী তাঁর একমাত্র ছেলেকে (৫) নিয়ে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন। এরপর থেকে বখাটে শামীম ওই তরুণীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। শামীম প্রথমে বিয়ের প্রলোভন এবং পরে তাঁর শিশুসন্তানকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে এক মাস আগে জোরপূর্বক তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। এরপর কিছুদিন আটক রেখে তাঁকে ধর্ষণ করেন।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সাত বছর আগে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ওই তরুণীর বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর দাম্পত্য বিরোধ দেখা দিলে একমাত্র ছেলেকে (৫) নিয়ে তিনি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বাবার বাড়িতে চলে যান। এরপর থেকে বখাটে শামীম ওই তরুণীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। শামীম প্রথমে বিয়ের প্রলোভন এবং পরে তাঁর শিশুসন্তানকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে এক মাস আগে জোরপূর্বক তাঁকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যান। এরপর কিছুদিন আটক রেখে তাঁকে ধর্ষণ করেন। শামীমের হাত থেকে বাঁচতে মেয়েটি নবীগঞ্জ উপজেলার একটি বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে বাবার বাড়ি থেকে চলে যান। গত সোমবার রাত ১২টার দিকে বখাটে শামীম তাঁর লোকজনকে নিয়ে মেয়েটির বাবার বাড়িতে যান। মেয়েটিকে না পেয়ে বৃদ্ধ বাবাকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ গভীর রাতে অভিযানে নেমে চারজনকে আটক করে। ওই আটক ব্যক্তিরা হলেন মামলার ২ নম্বর আসামি গোতগাঁও গ্রামের ধনাই মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া (৩০), ৩ নম্বর আসামি গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ইলাক উদ্দিন (২৫), ৪ নম্বর আসামি জাহির উদ্দিনের ছেলে আক্কা হোসেন (২৭) ও ৫ নম্বর খানপুর গ্রামের জাফর খানের ছেলে আলম খান (২৮)। তবে পরদিন বুধবার এজাহারের বাইরে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কাজল মিয়া নামের আরেকজনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। কাজল নওয়াগাঁও গ্রামের সাঞ্জব আলীর ছেলে। পলাতক থাকায় আগের দুই অভিযানেই ঘটনার মূল হোতা শামীমকে ধরতে পারেনি পুলিশ। অবশেষে আজ তিনি গ্রেপ্তার হলেন।