জগন্নাথপুরে হাওরের ফসল রক্ষার ১০ বাঁধ ঝুঁকিতে

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ফসল রক্ষায় নির্মিত অন্তত ১০টি বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ি ঢল বা টানা বৃষ্টিতে মুহূর্তেই এসব বাঁধ ভেঙে যাওয়ার অশঙ্কা রয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

ঝুঁকিতে আছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় হাওরের ফসল রক্ষায় নির্মিত ১০টি বাঁধ। অভিযোগ উঠেছে, বাঁধগুলো নির্মাণ করা হয়েছে দায়সারাভাবে। পাহাড়ি ঢল নামলে বা বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে এসব বাঁধ নিমিষেই ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হাওরে পানি ঢুকে ঘটতে পারে ফসলহানি।

‘হাওর বাঁচাও’ আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে হাওর ঘুরে ১০টি বাঁধ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে আজ সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন কমিটির প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেছেন, বেশির ভাগ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে দায়সারাভাবে।

কৃষক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতাদের সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দে হাওরে ২৮টি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে এসব বাঁধের নির্মাণকাজ করা হয়। ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি এবার উপজেলার ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ করেছে।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে নলুয়ার হাওরের ১০টি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে নলুয়ার হাওরের ৫ ও ৬ নম্বর প্রকল্পের আওতাধীন ভূরাখালি খেয়াঘাট ও ভুরাখালি বাঁধ; ৭, ৮, ৯ নং প্রকল্পের আওতাধীন সালিকার বেড়িবাঁধ, ১০ নম্বর প্রকল্পের ডুমাখালি বেড়িবাঁধ, ১১ নম্বর প্রকল্পের গাদিয়ালা বেড়িবাঁধ এবং ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর প্রকল্পের আওতাধীন বেতাউকা বেড়িবাঁধ ও বেতাউকা জলকপাট বেড়িবাঁধ।

বাঁধগুলো নির্মাণ ও সংস্কার শুরু হয় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা ছিল। তা না হওয়ায় ১৫ মার্চ সময় বাড়ানো হয়। এরপরও অধিকাংশ ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। আবার অনেকগুলো বাঁধ দায়সারাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় হাওরে কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে ধান কাটা
ছবি: প্রথম আলো

বাঁধ ঘুরে এসে হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নলুয়ার হাওরের ৫ থেকে ১৪ নম্বর বাঁধের কাজের মান সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে ৫ নম্বর প্রকল্পের ভুরাখালি ডহর, ৭ নম্বর সালিকার বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত এসব বাঁধ জোর তদারকির মাধ্যমে সংস্কার করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পাউবোর মাঠ কর্মকর্তাকে তাঁরা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

নলুয়ার হাওরের ভূরাখালি এলাকায় ৫ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রকল্পের একটি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ। আমি শুরুতে ওই অংশে বাঁশ ও বস্তা প্রাক্বলনে ধরে দিতে বললেও পাউবোর কর্মকর্তারা আমলে নেননি। এখন আমাকে বলছেন বাঁশ বস্তা ফেলার জন্য। আমি বাঁশ ও বস্তা ফেলার কাজ করছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে ঝুঁকিপূর্ণ এসব বেড়িবাঁধে এখনো কাজ চলছে। নলুয়া ও মইয়ার হাওর ঘুরে দেখা গেছে হাওরজুড়ে ধান পাকা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করেছেন।

নলুয়ার হাওরে ধান কাটার ফাঁকে কথা হয় সালদিকা গ্রামের কৃষক রাজন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, যেভাবে বালু মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে সামান্য বৃষ্টি হলে এসব বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ডুকবে। আরেক কৃষক ভূরাখালি গ্রামের আকিক মিয়া বলেন, আকাশে বৃষ্টি দেখা দিলে রাত হলে ঘুম হয় না কষ্টার্জিত ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সীমিত পরিসরে জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সোমবার তিনি নিজে উপস্থিত থেকে নলুয়া ও মইয়ার হাওরে কয়েকজন কৃষকের ধান কাটা পর্যবেক্ষণ করেছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জগন্নাথপুরে এবার ২০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে নলুয়ার হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলার মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি বাঁধ প্রকল্পে গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। জগন্নাথপুর ইউএনও সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘হাওরের ফসল রক্ষায় জরুরি সভা করে বেড়িবাঁধ রক্ষায় যা করা দরকার, তা করতে পিআইসিদের বলেছি। আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে।’