জঙ্গলমতো পরিত্যক্ত জায়গাটি এখন সুন্দর পার্ক

ঠাকুরগাঁও শহরে বানানো ‘ডিসি পর্যটন পার্ক’। গত শনিবার পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শিশুদের নিয়ে বেড়াতে আসেন অনেকেই।
ছবি: প্রথম আলো

কিছুদিন আগেও জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত। ময়লা–আবর্জনায় ঠাসা জঙ্গলের মতো একটি স্থান। লোকজন তেমন একটা আসে না বলে আস্তানা গড়ে তুলেছিল মাদকসেবীরা। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়নের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে সুন্দর এক পার্ক। নাম ডিসি পর্যটন পার্ক। কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও গত শনিবার পার্কটি মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সময় কাটাতে এখানে ভিড় করছে নানান শ্রেণি–পেশার মানুষ।

স্থানীয় মানুষের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি অনেকটা জঙ্গলের মতো ছিল। এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসত, চলত নানা অসামাজিক কাজ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা শহরে পার্ক স্থাপনের বিষয়টি আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের পশ্চিমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ক্যাম্পের পাশে চার একর খাসজমি পার্কের স্থানের জন্য চিহ্নিত করেন। ওই বছরের ৯ মে পার্ক স্থাপনের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রাণালয়ের সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কোনো সাড়া না পেয়ে জেলা প্রশাসক স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পার্কের কাজ এগিয়ে নেওয়ার উদ্যাগ নেন। এর মধ্যে পার্কটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।

কাজের শুরুতে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্টুডিও ভরমিনের নকশায় সেখানে স্থাপন করা হয় মুজিব বর্ষ চত্বর। চত্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাত বীরশ্রেষ্ঠের অবদানের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবসকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপর সেখানে পর্যায়ক্রমে তৈরি করা হয় হাঁটাপথ, লেক, এলাকার জনপ্রিয় আমের জাতের নামে সূর্যপুরী ফোয়ারা, ইংরেজি অক্ষরে লেখা আই লাভ ঠাকুরগাঁও, শিশুদের বিনোদনের জন্য কয়েকটি রাইড, বসার জন্য বেঞ্চ। আরেক পাশে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী চত্বর। সন্ধ্যার পরও যাতে স্থানীয় লোকজন সময় কাটাতে পারেন, সে জন্য পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সন্ধ্যায় রঙিন বাতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে পার্কের নানা স্থাপনা। কাজ শেষ না হলেও স্থানীয় ব্যক্তিরা শিশুদের নিয়ে পার্কটিতে ভিড় করেছেন। অনেকেই পার্কটির হাঁটাপথে হাঁটছেন। তাঁদের কেউ কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন।

পার্কে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আহসান আলীর (৬৭) সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি জঙ্গলের মতো ছিল। সদিচ্ছা থাকলে পরিত্যক্ত একটি জায়গাকেও যে চমৎকার কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব, এই পার্ক এর অন্যতম উদাহরণ। কাজ শেষ হলে সবকিছু আরও চমৎকার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শহরের আশ্রমপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান (৪২) বলেন, শহরের শিশুদের নিয়ে সময় কাটানো যায়, তেমন কোনো জায়গা ছিল না। পার্কটিতে বাচ্চাদের খেলার জন্য সুন্দর আয়োজন রাখা হয়েছে। আরেক বাসিন্দা ব্যবসায়ী শেখ শহিদুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘শুনেছি এই পার্কে শিশুদের জন্য আধুনিক সব রাইড স্থাপন করা হবে। সেসব হয়ে গেলে আমাদের পাশাপাশি শিশুরাও সময় কাটানোর জায়গা পেয়ে যাবে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চত্বরের নকশা করেছে ইউডিসি ইউনিটি ডিজাইন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ফার্ম নামের স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের স্থপতি মো. শাম্মুর রহমান বলেন, চত্বরের নকশায় একটি সমবাহু ত্রিভুজকে নির্বাচন করা হয়েছে, যার তিনটি বাহু দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় এবং উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণকে বোঝানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান বলেন, জেলায় প্রায় ১৫ লাখ লোকের বসবাস। কিন্তু এখানে বিনোদনের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এলাকার মানুষের সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি শিশু-কিশোররা যাতে সুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে, এটাই এই পার্ক নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য। জায়গা ছোট হলেও দৃষ্টিনন্দন করেই এটি সাজানো হচ্ছে।