কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: সাক্ষাৎকার

জনগণ আমাকে ভোট দেবে: মনিরুল হক

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু একে অপরের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। আরফানুল হকের দাবি, সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক কোটি কোটি টাকার যে দুর্নীতি করেছেন, তার প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। মনিরুলের পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, পারলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ জনসমক্ষে হাজির করুক। তবে দুই প্রার্থীই স্বীকার করেছেন, তাঁদের লড়াই হবে সমানে সমান। বুধবার কুমিল্লায় দুই মেয়র প্রার্থীর বাসভবনে নেওয়া সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও প্রথম আলোর কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

গত নির্বাচনে আপনি দলের প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করছেন এবং বিএনপি থেকে আরেকজন প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেই ক্ষেত্রে লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন নয় কি?

মনিরুল হক: আমি বুঝতে পারছি না, তিনি (স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার) কেন নির্বাচন করছেন? নির্বাচন করতে হলে জনসমর্থন দরকার। তাঁর কোনো জনসমর্থন নেই। সারা দেশে বিএনপির অবস্থা ভালো নয়। একজন নির্বাচন করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমি তাঁকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলব না।

প্রশ্ন :

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। তারপরও আপনি প্রার্থী হলেন কেন?

মনিরুল হক: বিএনপি ২০১২ সালে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ও ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন করলেও মাত্র ৭টি আসন পেয়েছে। যে দল তিনবার ক্ষমতায় গেছে, সেই দল এই ফল করতে পারে না। এ কারণে দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। তবে আমি মনে করি, জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচন এক নয়। আমি প্রার্থী না হলে আমার কর্মী ও সমর্থকেরা ব্যথিত ও বঞ্চিত হতেন। দল আমাকে ছাড়লেও আমি দল ছাড়িনি। দলের বাইরে কিছু করব না। জনগণ আমার পক্ষে রায় দেবে।

প্রশ্ন :

অনেকে বলেন, মেয়র হিসেবে আপনি ব্যর্থ। জনজীবনের সমস্যা দূর করতে পারেননি।

মনিরুল হক: আমি ব্যর্থ হয়েছি মনে করি না। ১০ বছর খুব বেশি সময় নয়। যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আগের চেয়ে সমস্যা কমেছে। জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ, কুমিল্লা-নোয়াখালী চার লেন মহাসড়কের সম্প্রসারণ কাজের জন্য কান্দি–খাল ভরাট করা। ওই কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।

প্রশ্ন :

প্রতিপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও বিদেশে বাড়ি করার অভিযোগ এনেছে।

মনিরুল হক: আমি তাঁদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, এটি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। তাঁরা এত দিন অভিযোগ করলেন না কেন? আমি দুর্নীতি করে থাকলে তাঁরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুদকে তথ্য-প্রমাণ দেন না কেন? কানাডায় বাড়ি থাকার কথাও সম্পূর্ণ মিথ্যা।

প্রশ্ন :

নির্বাচনী পরিবেশ কেমন? কোনো বাধা পাচ্ছেন কি?

মনিরুল হক: আপাতত পরিবেশ ঠিক আছে। নির্বাচনী প্রচারে প্রকাশ্যে কোনো বাধা নেই। তবে আমার কর্মীদের টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি একজনের কাছে ৩২ বার টেলিফোন করা হয়েছে। নির্বাচনের পর কোথায় থাকবে, জানতে চেয়েছেন। নির্বাচনী পরিবেশের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যই (কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন) সমস্যা। তিনি আওয়ামী লীগের অফিসে ডেকে সবাইকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য বলছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক, এনজিও কর্মকর্তা, শ্রমিকসংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। এটি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে আমরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি তদন্ত করছে।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী (টেবিল ঘড়ি প্রতীক) মনিরুল হকের গণসংযোগ। আব বুধবার কুমিল্লায় নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মগবাড়ি চৌমুহনী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

গত বছর শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় আপনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বাবু গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এসে আপনার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

মনিরুল হক: তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ না হওয়ায় বলা যায় না সে দোষী। পূজামণ্ডপের ঘটনার পরপরই প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এমপি সাহেব আমাকে টেলিফোনে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলেছেন।

প্রশ্ন :

গত দুই নির্বাচনে আপনার জয়ের পেছনে আওয়ামী লীগের বিভক্তি কাজ করেছে। আপনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরোক্ষ সমর্থন পেয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে। কী বলবেন?

মনিরুল হক: আওয়ামী লীগে যেভাবে বিভক্তি ছিল, বিএনপিতে সেই রকম বিভক্তি নেই। আওয়ামী লীগের বিভক্তির কারণেই অনেকে প্রচার করেছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আমার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু আমি কখনোই আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে নির্বাচন করিনি। যদি ভর করতাম, তাহলে এবার তো প্রার্থী হতাম না। এগুলো অবান্তর কথা।

প্রশ্ন :

২০১২ ও ২০১৭ সালে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। ২০২২ সালের চ্যালেঞ্জটি কীভাবে মোকাবিলা করবেন?

মনিরুল হক: ২০১৭ সালে আমি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছি। ফলে দলের সব নেতা-কর্মী আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এবারে অনেকে মাঠে নামতে না পারলেও তাঁদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। সিটি মেয়র থাকাকালে আমি দলমত-নির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করেছি। আশা করি এবারও তাঁরা আমাকেই ভোট দেবেন।

প্রশ্ন :

আপনি বলছেন, নিজাম উদ্দিনের কোনো প্রভাব নেই। কিন্তু তাঁর ভগ্নিপতি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের তো দলে প্রভাব আছে।

মনিরুল হক: তিনি (আমিন উর রশিদ ইয়াছিন) তো দুইবার নির্বাচনে ফেল করেছেন। তবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এমপি হয়েছিলেন। পরের নির্বাচনে (২০০১ সালে) তিনি প্রার্থী হননি। অসুস্থতার কথা বলে লন্ডনে চলে যান। দলে তাঁরও খুব প্রভাব আছে বলে মনে করি না।

প্রশ্ন :

আগামী নির্বাচনে আপনার প্রতিশ্রুতি কী?

মনিরুল হক: গতবার আমি ২৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলাম। এর ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। প্রকল্প অনুমোদন করতে সরকার ৯ মাস সময় নিয়েছে। এ কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ শেষ করতে পারিনি। তা ছাড়া শুধু কুমিল্লা নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে জলাবদ্ধতার সমস্যা আছে। আগামী নির্বাচনে জনগণ আমাকে ভোট দেবে। আমার ৩০ শতাংশ কাজ বাকি আছে।

প্রশ্ন :

আপনাকে ধন্যবাদ।

মনিরুল হক: প্রথম আলোর পাঠককে ধন্যবাদ।