জনবলসংকটে উৎপাদন কমছে

উৎপাদনের পরিমাণ

চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও অন্যান্য জনবলসংকটে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ও ৪২টি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। খরা, লবণাক্ততা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও এই বিভাগে গবাদিপশু উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু জনবলসংকটের কারণে এই কার্যক্রম গতি হারাচ্ছে। এই বিভাগে ৫২২টি পদের বিপরীতে ২২১টি পদই শূন্য।

খামারিরা বলছেন, গবাদিপশুর রোগব্যাধি হলে তাঁরা সময়মতো পরামর্শ ও সেবা পাচ্ছেন না। প্রাণিসম্পদ বিভাগে লোকবলসংকট থাকায় স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হয়। এতে অনেক সময় বিপদে পড়তে হয় তাঁদের। বরগুনার খাজুরতলা গ্রামের খামারি হালিম মোল্লা বলেন, তাঁর ৪৫টি গরু থেকে প্রতিদিন ২৫০ কেজি দুধ উৎপাদিত হয়। লোকবলসংকট থাকায় খামারের গরুর অসুখবিসুখ হলে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। হাসপাতাল থেকেও কোনো ওষুধ পান না।
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলে গবাদিপশু উৎপাদনে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও নানা চ্যালেঞ্জ আছে। জনবলসংকট এখন এতটাই প্রকট যে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণে মাঠপর্যায়ে তাঁদের হিমশিম খেতে হয়। ৬টি জেলা ও ৪২ উপজেলায় বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কর্মরত আছেন ৩০১ জন। এই জনবল দিয়ে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম চালানো কঠিন।

উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ জনবলসংকট। এ কারণে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে গবাদিপশু উৎপাদনে প্রযুক্তির ঘাটতি, সচেতনতার অভাব, কৃত্রিম প্রজননে খামারি ও সাধারণ মানুষের অনীহাও আছে।
মনিরুল ইসলাম, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, বরগুনা

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উৎপাদন ও গবাদিপশুর জাতগত বৈচিত্র্যের দিক থেকেও বাংলাদেশ বেশ সমৃদ্ধিশালী। বিভাগীয় প্রাণিসম্পদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গরু উৎপাদন হয় ১ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ১১ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি হয়। ২০১৯ সালে কিছুটা কমে যায়। একইভাবে ২০১৭ সালে দুধ উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৩৯ লাখ মেট্রিক টন, ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টনে উৎপাদন পৌঁছালেও ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টনে।

বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ জনবলসংকট। এ কারণে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে গবাদিপশু উৎপাদনে প্রযুক্তির ঘাটতি, সচেতনতার অভাব, কৃত্রিম প্রজননে খামারি ও সাধারণ মানুষের অনীহাও আছে।

৪২টি উপজেলায় ৪২ জন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার জায়গায় আছেন মাত্র ১৭ জন। একই সংখ্যক পদে ভেটেরিনারি সার্জন আছেন ২৩ জন।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, ৪২টি উপজেলায় ৪২ জন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার জায়গায় আছেন মাত্র ১৭ জন। একই সংখ্যক পদে ভেটেরিনারি সার্জন আছেন ২৩ জন। এ ছাড়া ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্টের (ভিএফএ) সংখ্যা ৯৩, পদ ১১৮টি। ছয় জেলার ছয়টি পদে হিসাবরক্ষক মাত্র দুজন। ৪২ জন উপসহকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার (সম্প্রসারণ) জায়গায় দায়িত্বে আছেন ৪ জন এবং একই পদের প্রাণিস্বাস্থ্যের দায়িত্বে ২২ জন। এ ছাড়া উপসহকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার (কৃত্রিম প্রজনন), অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ও নৈশপ্রহরীর পদেও জনবলসংকট আছে।

ঝালকাঠি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাহেব আলী বলেন, অনেক পদই শূন্য। এ জন্য মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি মাসেই অবহিত করা হয়।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের উপপরিচালক কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্প চলমান আছে। এসব প্রকল্পের কর্মীদের মাধ্যমে আপাতত সেবা দেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই সমাধান হবে।