জমি দখল নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

  • প্রবিধান অনুযায়ী কর্মস্থলে পুলিশ সদস্যদের নিজ ও স্বজনদের নামে জমি কিনতে নিষেধ আছে।

  • বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় কর্মরত থাকাকালে স্ত্রীর নামে জমি কেনেন এক এসআই।

  • জমি দখল নিয়ে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন এক স্কুলশিক্ষক।

বগুড়ার শাজাহানপুরে একই জমি এক পক্ষ বিক্রি করে এক স্কুলশিক্ষকের কাছে, অন্য পক্ষ বিক্রি করে পুলিশের এক কর্মকর্তার কাছে। সম্প্রতি এই জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে ওই স্কুলশিক্ষক ও পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে। মালিকানা দাবি করায় স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন পুলিশ কর্মকর্তার ভাই।

১২ এপ্রিল জমি দখল নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন স্কুলশিক্ষক।

অভিযোগকারী স্কুলশিক্ষকের নাম এ কে এম আবদুল মতিন আকতার। তিনি শাজাহানপুরের কামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও মাঝিড়া নাসির উদ্দিন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক। আর পুলিশের কর্মকর্তা হলেন আতিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি পুলিশের রংপুর রেঞ্জে পরিদর্শক পদে কর্মরত। শাজাহানপুর থাকাকালে তিনি স্ত্রীর নামে ওই জমি কেনেন। দলিলে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ।

পুলিশ প্রবিধানের ১১২(ঙ) ধারায় বলা আছে, পুলিশ কর্মকর্তারা নিজ জেলা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে মহাপরিদর্শকের পূর্বানুমতি ছাড়া স্বনামে, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়স্বজন, চাকরবাকর বা আশ্রিত ব্যক্তির নামে বা বেনামে জমি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারবেন না। তবে এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেছেন, কর্মস্থলে স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যদের নামে জায়গা কিনতে কোনো বাধা নেই।

পুলিশ প্রবিধানের ১১২(ঙ) ধারায় বলা আছে, পুলিশ কর্মকর্তারা নিজ জেলা ছাড়া অন্য কোনো স্থানে মহাপরিদর্শকের পূর্বানুমতি ছাড়া স্বনামে, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, আত্মীয়স্বজন, চাকরবাকর বা আশ্রিত ব্যক্তির নামে বা বেনামে জমি বা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারবেন না।

স্কুলশিক্ষক আবদুল মতিনের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে শাজাহানপুর থানায় কর্মরত থাকাকালে তৎকালীন এসআই আতিকুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী লায়লা আতিকের নামে উপজেলা সদরের সাজাপুর গ্রামের জামাত আলী নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে কবলা দলিলে ৪ শতক জমি কিনে নেন। কিন্তু জামাত আলীর বড় চাচা মফিজ উদ্দিন আগেই এই সম্পত্তি আবদুল মতিনের দাদা নসির উদ্দিনের কাছে বিক্রি করে দেন।

অভিযোগে আবদুল মতিন উল্লেখ করেছেন, মতিন আকতারের দাদা প্রয়াত নসির উদ্দিন ১৯৮১ সালে সাজাপুর মৌজায় ১০ শতক জমি কবলা করেন। সাজাপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন ও আফিজ উদ্দিন কবলা দলিল সম্পাদনা করে দেন। ওই সম্পত্তি ভোগদখল করেন নসির উদ্দিনের ছেলে ও চুপিনগর উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেক। পরে আবদুল খালেক তাঁর বড় ছেলে এ কে এম আবদুল মতিন আকতারের নামে লিখে দেন।

দুদক ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগে এ কে এম আবদুল মতিন আকতার উল্লেখ করেছেন, মূলত কৌশলে আরেক ওয়ারিশের কাছ থেকে স্ত্রীর নামে জমি লিখে নেন পুলিশের কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম। এরপর পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা করেন। দখলে বাধা দিতে গেলে ২০১৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আতিকুল ইসলাম তাঁর ভাই শফিকুল ইসলামকে দিয়ে শাজাহানপুর থানায় মতিন, তাঁর বাবা আবদুল খালেকসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা করেন। পরে চাঁদাবাজির মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।

আবদুল মতিন আরও অভিযোগ করেছেন, আতিকুল ইসলাম জায়গাটি জবরদখল করে নেওয়ার পর তাতে মাঝিড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল জোব্বার হোটেল নির্মাণ করেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জমির ক্ষতিপূরণ হাতিয়ে নিতে এখন তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিএনপির নেতাকে দিয়ে জমিতে পাকা দেয়াল তোলার চেষ্টা করছেন। এতে নতুন করে হয়রানি করা হচ্ছে।

আবদুল জোব্বার বলেন, ব্যবসার প্রয়োজনে আতিকুল ইসলামের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া চুক্তিতে ২০১৭ সালে ৪ শতক জায়গা ভাড়া নিয়েছেন। এখন সড়ক সম্প্রসারণে অধিগ্রহণের পর অর্ধেক জায়গা ভাড়াটে হিসেবে সংরক্ষণ করতে ইটের দেয়াল তুলছেন।

হয়রানির অভিযোগ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, কাউকে হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি প্রকৃত মালিকের কাছে থেকেই জমি কিনেছেন।