জমি নিয়ে বিজ্ঞানীদের দ্বন্দ্বে গবেষণা ব্যাহত

কে কী পরিমাণ জমি ব্যবহার করবে, তা নিয়ে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে।

বিডব্লিউএমআরআই

রাজশাহীর শ্যামপুরে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিডব্লিউএমআরআই) আঞ্চলিক কার্যালয়টি আগে গম ও ভুট্টা গবেষণার আঞ্চলিক কেন্দ্র ছিল। একই কেন্দ্রের ভেতরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) সরেজমিন গবেষণা বিভাগও ছিল। ২০১৭ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণার আঞ্চলিক কেন্দ্রটিকে ইনস্টিটিউট করা হয় এবং কেন্দ্রের সব স্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধীনে থাকার গেজেট প্রকাশ করা হয়।

দুই বছর ধরে এই কার্যালয়ের গবেষণা মাঠের জমি নিয়ে সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতবিরোধ চলছে। এর জেরে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কার্যালয়ে মোট আবাদযোগ্য ২০ একর জমি আছে। গত মঙ্গলবার সরেজিমেন দেখা যায়, কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। কিছু জমিতে চাষ হয়েছে টমেটো, তিল ও অন্যান্য ফসল। বিডব্লিউএমআরইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রতিবছর আশপাশের দুই শতাধিক কৃষক উন্নত মানের গম বীজ সংগ্রহ করতে পারতেন। কিন্তু ২০১৯-২০ মৌসুমে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের জমি অন্যান্য ফসল (ডাল, তেল ও মসলাবীজ) উৎপাদনে ব্যবহার করে। এ কারণে এই সময় গমের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাজহারুল আনোয়ার বলেন, গমের মৌসুমে বেশির ভাগ জমি গমের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন ভুট্টা মৌসুম না, তবুও তারা (বিডব্লিউএমআরআই) জমি দখল করে রেখে ভুট্টা লাগিয়েছে। এতে সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বেশির ভাগ জমি গমের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন ভুট্টা মৌসুম না, তবুও তারা জমি দখল করে রেখে ভুট্টা লাগিয়েছে। এতে সরেজমিন গবেষণা বিভাগের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মাজহারুল আনোয়ার, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ

বিডব্লিউএমআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিয়াছ হোসেন বলেন, খরাসহিষ্ণু জাত উৎপাদন ও উদ্ভাবনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা দীর্ঘদিন ধরে এখানেই পরিচালিত হয়। ২০২০-২১ মৌসুমে সরেজমিন গবেষণা বিভাগ জমি দখল করে রাখায় সে গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ২৪ এপ্রিল বিডব্লিউএমআরআইয়ের একটি পাওয়ার টিলার মাঠে নামানোর সময় সরেজমিন বিভাগের ১৩ জন শ্রমিক তাঁদের পাওয়ার টিলার নিয়ে সামনে দাঁড়ান। তাঁরা হাঁসুয়া হাতে মারমুখী আচরণও করেন। প্রতিবাদ করতে গেলেই বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। বিষয়টি বিডব্লিউএমআরআইয়ের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

বিডব্লিউএমআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গেজেটের একটি কপি দেখান। সেখানে বলা আছে, ‘বিলুপ্ত গম গবেষণা ও ভুট্টা শাখার সকল কার্যক্রম এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গম গবেষণা কেন্দ্রের সকল গবেষণা কেন্দ্র, আঞ্চলিক কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, গবেষণা প্রকল্প এবং স্থাপনা ইনস্টিটিউটের নিকট হস্তান্তরিত ও উহার ওপর ন্যস্ত হইবে।’

এর ভিত্তিতে ইলিয়াছ হোসেন বলেন, এই গেজেট বলে গম ও ভুট্টা গবেষণা কেন্দ্রের জমি বর্তমান গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে থাকবে।

তবে এ বিষয়ে সরেজমিন গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাজহারুল আনোয়ার বলেন, কৃষকের মাঠ ছাড়াও গবেষণা কেন্দ্রের মাঠেও তাঁরা কাজ করতে পারেন। গবেষণা মাঠে তাঁরা অতীতে অল্প পরিমাণে করেছেন, বিডব্লিউএমআরআই বেশি করেছে। তিনি আরও বলেন, তাদের মহাপরিচালক ২০২০ সালের অক্টোবরে একটি চিঠি দিয়ে বলেছেন, বিডব্লিউএমআরআই শুধু ৭ একর জমি ব্যবহার করবে। বাকিটা সরেজমিন গবেষণা বিভাগ ব্যবহার করবে।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইসরাইল হোসেন বলেন, সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এখন কেন্দ্রের ভেতরের জমি চাচ্ছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্যও একটা আলোচনা চলছে।