জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে সেবা

পটুয়াখালীর গলাচিপার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ও শিশু ওয়ার্ডে ভবনের ছাদ ও বিমের পলেস্তারা থসে রড বের হয়ে আছে
ছবি: প্রথম আলো

ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বের হয়ে আছে মরিচা ধরা লোহার রড। বিমের অবস্থাও খুব খারাপ। বিমে ফাটল ধরেছে। এই দুরবস্থা পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনের। এই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এই ভবনে রয়েছে নারী ও শিশু ওয়ার্ড। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও থাকেন আতঙ্কে।

গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের ১ জুলাই গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার ছিল। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর এটাকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ওই সময় পুরোনো ভবন–লাগোয় আরেকটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে। ৩১ শয্যার পুরোনো দ্বিতল ভবন নারী ও শিশুদের ওয়ার্ড এবং নতুন ভবনে পুরুষদের ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এখানে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকে।

সম্প্রতি দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনের ছাদ ও বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদ ও বিমের মরিচা ধরা লোহার রড বের হয়ে আছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ভবনের দোতলার পশ্চিম পাশে নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে রোগী ও তাদের স্বজনেরা একটু পরপর ছাদের দিকে তাকাচ্ছে। ছাদ ও বিম থেকে পলেস্তারা মাঝেমধ্যে খসে পড়ায় তাদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।

গলাচিপার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের তানিয়া বেগম বলেন, তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার দেড় বছরের মেয়ে ফারহানাকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছেন। মাঝেমধ্যে ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে।

২০১৭ সাল থেকে এই পুরোনো ভবনের ছাদ ও বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ অবস্থায় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

পুরোনো ভবনের দোতলার পূর্ব দিকে শিশু ওয়ার্ডটি একেবারেই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই ওয়ার্ড জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ এটি ব্যবহার না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বলে জানালেন এক নার্স। কিন্তু তারপরও দুজন নারী রোগী সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন রাহিমা বেগম (২৫)। বাড়ি উপজেলার পানপট্টি গ্রামে। রাহিমার স্বামী শহীদ সর্দার জানান, গ্রামের তাঁর স্ত্রীর স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। তবে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় দ্রুত নবজাতকসহ তাঁর স্ত্রীকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। শয্যা না থাকায় তাঁরা এই ভবনে খালি শয্যা পেয়ে এসেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স জানান, শুধু রোগীদের মাথার ওপর ছাদে ও বিমে ফাটলই নয়, তাদের বসার কক্ষেরও একই অবস্থা। এ জন্য তাদেরও থাকতে হয় আতঙ্কে।

গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ২০১৭ সাল থেকে এই পুরোনো ভবনের ছাদ ও বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ অবস্থায় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসভবনও জরাজীর্ণ। এসব বিষয়ে পটুয়াখালী স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানোর পর ২০১৮ সালের প্রথম দিকে পুরোনো ভবনটি মেরামত করা হয়। কিন্তু সেই মেরামত টেকসই হয়নি। পরে আবারও ভবনট ছাদ ও বিম থেকে পলেস্তারা খসে পড়া শুরু হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের পুরোনো ভবনের ছাদ ও বিমের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। শুধু রোগী ও তাদের স্বজনেরাই নয়, চিকিৎসকদেরও এখানে আতঙ্কে থাকতে হয়।