জলকপাট খুলে দেওয়ায় কৃষক বিপদে, প্রতিবাদ

নড়াইলের কালিয়ায় জলকপাট খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে কৃষকদের মানববন্ধন। ছবি: প্রথম আলো
নড়াইলের কালিয়ায় জলকপাট খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে কৃষকদের মানববন্ধন। ছবি: প্রথম আলো

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের নবগঙ্গা নদীর শীতলবাটি, চিত্রা নদীর পেড়লী গ্রামের কাটাখাল ও জামরিলডাঙ্গার খালের ওপর নির্মিত জলকপাট (স্লুইস গেট) খুলে দেওয়ার প্রতিবাদে ও জলকপাট বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকার কৃষকেরা। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় এলাকায় মানববন্ধন করে এ দাবি জানান তাঁরা।

কৃষকদের অভিযোগ, জলকপাট রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে খুলে দিয়েছেন।

জলকপাট দেওয়ায় পেড়লী বিলসহ ইছামতী বিলের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ায় এলাকার ছয় হাজার কৃষি পরিবার বিপদে পড়েছে। এ ছাড়া ২০০ মাছেরঘের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মাছ ধরতে দুর্বৃত্তরা গত রোববার ভোরে জলকপাটগুলো খুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পেড়লী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিশিকান্ত রায় জানান, নদীর পানি ঢোকানোর ফলে আমন ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

পেড়লী গ্রামের তকিবর রহমান বলেন, বিল থেকে মাছ ধরার জন্য এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জলকপাট খুলে দিয়ে বিলে পানি ঢোকাচ্ছে। এতে ধানের পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মো. আবদুল্লাহ শেখ ও ছুরত মোল্লা বলেন, স্লুইস গেট খুলে দেওয়ায় পেড়লী ও ইছামতী বিলে লাগানো প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

এই দুটি বিলের চারপাশে ছয়টি জলকপাট। তিনটি জলকপাট যশোর অভয়নগর থানাধীন ও বাকি তিনটি নড়াইল জেলার। নড়াইলের জলকপাটগুলো চিত্রা ও নবগঙ্গা নদী এবং অভয়নগরেরগুলো ভৈরব নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। জলকপাটের উচ্চতার চেয়ে বিলের অবস্থানও বেশ নিচু। ফলে নদীর জোয়ারের পানি ঢুকলে ভাটায় তা পুরোপুরি নামতে পারে না। আর জলকপাটগুলো অনেক পুরোনো। ডালায় মরিচা ধরেছে। ঝুঁকিপূর্ণ জলকপাটগুলো যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জলকপাট খুলে দেওয়ায় চিত্রা ও নবগঙ্গা নদীর পানি পেড়লী ও ইছামতী বিলে ঢোকায় মাছের ঘের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
জলকপাট খুলে দেওয়ায় চিত্রা ও নবগঙ্গা নদীর পানি পেড়লী ও ইছামতী বিলে ঢোকায় মাছের ঘের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

কালিয়ার পেড়লী ইউনিয়নের শীতলবাটি গ্রামের জলকপাট দেখভাল করেন ইকরাম ফকির। পেড়লী কাটাখালের দায়িত্বে পল্টু মোল্লা। জামরিলডাঙ্গা জলকপাট দেখভাল করেন রোস্তম মোল্লা। এখন জলকপাট খোলা কেন, এমন প্রশ্নে তাঁরা দাবি করেন, এই সময়ে নদীর ঘোলা পানি বিলে ঢোকালে জমিতে পলি জমবে। এতে ধান চাষে সুবিধা হবে। তাঁরা বলেন, পেড়লী বিলে প্রায় ২০০ মাছের ঘের আছে। এই ঘের রক্ষার জন্য ঘের মালিকেরা এমন অভিযোগ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহায়ক আবুল হোসেন বলেন, এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দিনের জন্য জলকপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এলাকায় এসেছেন। যারা জলকপাটের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের জানানো হয়েছে।

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, পেড়লী ইউনিয়নের জলকপাট খুলে দিয়ে নদীর পানি বিলে ঢোকানো হচ্ছে। এতে আমন ধানের পাত তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি বিষয়টি দেখার জন্য পেরলী পুলিশ ফাড়ি ইনচাজর্কে নির্দেশ দিয়েছেন।