জলমহালে মৎস্যজীবীকে গলা কেটে হত্যার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় এক মৎস্যজীবীকে গলা কেটে হত্যার প্রতিবাদে এবং ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা শহরের আলফাত স্কয়ারে রোববার দুপুরে
প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার একটি জলমহালে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও এক মৎস্যজীবীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে আজ রোববার মানববন্ধন হয়েছে। জেলা শহরের আলফাত স্কয়ারে ‘ক্ষত্রিয় বর্মণের ইতিহাস অনুশীলন ও কল্যাণ পরিষদ’ সংগঠনের উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়। পরে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয় তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘জাল যার, জলা তার’—এই নীতি অনুসরণে সরকার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে জলমহাল ইজারা দিলেও সত্যিকার অর্থে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা এ থেকে কোনো উপকার পান না। এলাকার ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই এসব জলমহাল নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁরাই জলমহালের সব সম্পদ লুট করেন। সাধারণ জেলেরা প্রতিনিয়ত তাঁদের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হন। শ্যামাচরণ বর্মণ হত্যার ঘটনাটি এর বড় প্রমাণ।

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই নদ জলমহালে ৭ জানুয়ারি রাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এতে মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫) নিহত হন। আহত হন আরও ১৫ থেকে ২০ জন। ঘটনার পর সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও নিহত ব্যক্তির ছেলে চন্দন বর্মণ (৩০) স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন (৫২), তাঁর ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকন (৩২), সাংসদের বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদসহ (৫৫) ৬৩ জনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

কিন্তু এজাহারে সাংসদ ও তাঁর ভাইদের নাম দেখে পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেনি। পরে ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আদালতে মামলার আবেদন করে নিহত ব্যক্তির পরিবার। কিন্তু এর আগেই পুলিশ বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি মামলা করে। ওই মামলা চলমান থাকায় থানা থেকে আদালতে প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আদালতে দাখিল করা মামলাটি স্থগিত এবং থানা থেকে প্রতিবেদন আসার পর এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে আদেশ দেন আদালত।

তবে পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলাটি ‘মনগড়া’ ও ‘সাজানো’ বলে দাবি করেছেন নিহত ব্যক্তির ছেলে চন্দন। তিনি আইনগত প্রতিকার চেয়ে ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। ঘটনার রাতেই পুলিশ ২৩ জনকে আটক করে। এর মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়া তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, ঘটনার দিন তিনি সেখানে ছিলেন না, এটি সবাই জানে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত একটি পক্ষ ফায়দা নেওয়ার জন্য এ ঘটনায় তাঁকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।