জাজিরা থেকে একটানে ভাঙ্গা, সময় লাগে ২০ মিনিট

উপর থেকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। মঙ্গলবার ফরিদপুরেরর ভাঙ্গায়ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

পদ্মার ওপারে জাজিরা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। এ পথ যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের মতো। জাজিরা থেকে শিবচরের পাচ্চর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক। এরপর এক্সপ্রেসওয়েতে বাকি ২০ কিলোমিটার। পুরো পথে কোথাও থামতে হয় না।

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হয় গত ১২ মার্চ। এর সুফল পাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তাদের অপেক্ষা শুধু পদ্মা সেতুর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সেতুটি চালু হলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা যাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টায়। ভাঙ্গায় গিয়েও ভোগান্তি নেই। সেখানে চৌরাস্তার মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ইন্টারসেকশন, যা দিয়ে যানবাহন না থেমেই বিভিন্ন জেলায় যেতে পারে। ফলে সহজ হয়েছে ২১ জেলার মানুষের চলাচল।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যেমন দেখায় এক্সপ্রেসওয়ে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর শহরের বাসিন্দা নুরুল আমীন থাকতেন দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশে ফেরার পর গত সোমবার তিনি বন্ধুদের নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে দেখতে ভাঙ্গা যান। তিনি বলেন, ‘জাজিরা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মোটরসাইকেলে ৩০ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগল ২০ মিনিটের মতো। মনে হয়েছে, বাংলাদেশ নয়, বিদেশের কোনো সড়কে চলছি।’

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৪ কোটি টাকা। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (পশ্চিম)। সেতুর দুই পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য সাড়ে পাঁচ মিটার প্রশস্ত সড়ক রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালে এক্সপ্রেসওয়েটির কাজ শুরু হয়। গত মার্চে এটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ এক্সপ্রেসওয়েতে ৫টি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু ও কালভার্ট রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র জানায়, বর্তমানে মাওয়া দিয়ে নৌপথে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার হয়। আর যাত্রী পারাপার হয় দৈনিক গড়ে দুই লাখ। পারাপারের জন্য ১৬টি ফেরি রয়েছে। শুধু যাত্রী পারাপারের জন্য ৮৭টি লঞ্চ ও ২৫০টি স্পিডবোট চলাচল করে। ফেরিতে যানবাহন পারাপার হতে সময় লাগে সোয়া ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা। আর লঞ্চে যাত্রীরা প্রায় ৪৫ মিনিট ও স্পিডবোটে ২০ মিনিটে নদী পার হতে পারেন।

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের প্রশস্ত সড়ক
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের ভাঙ্গার বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম মাতুব্বর বলেন, কুয়াশাসহ নানা কারণে প্রায়ই ফেরি বন্ধ থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে সেই সমস্যা থাকবে না।

পদ্মা সেতু না থাকায় এখন অনেকেই সরাসরি বাসে দক্ষিণের জেলাগুলোতে যান না। তার বদলে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত গিয়ে নেমে যান। এরপর ফেরী, লঞ্চ অথবা স্পিডবোটে পদ্মা পার হয়ে ওপারে গিয়ে বাসে অথবা মাইক্রোবাসে ওঠেন। এর কারণ ফেরিঘাটে বাসকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মঙ্গলবার দুপুরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন খুলনার সোনাডাঙ্গার দিদারুল ইসলাম। তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। বিশেষ প্রয়োজনে গ্রামে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ফেরি পারাপার বাসে উঠলে তাঁর বাড়ি যেতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে।

পরিবহন ব্যবসায়ীরাও পদ্মা সেতু চালুর অপেক্ষায়। ফরিদপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সিদ্দীকি প্রথম আলোকে বলেন, ফরিদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা পদ্মা নদীর কারণে ঢাকার থেকে বিচ্ছিন্ন। কুয়াশা-ঝড়, বন্যা, নাব্যতা–সংকট ইত্যাদি কারণে পদ্মা পার হতে দুর্ভোগ লেগেই থাকে। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়ে গেছে। এবার পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি বাস চলাচল বাড়বে। মানুষ সুফল পাবে।