জাতীয় পতাকা তুলে ধরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধে বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাড়ে ১৩ হাজার বর্গফুটের জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করে বগুড়া জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। বগুড়া জিলা স্কুল মাঠ, ২৬ মার্চ
ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া জিলা স্কুল মাঠজুড়ে ১৩ হাজার ৫০০ বর্গফুটের লাল–সবুজ রঙের বিশাল জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে লাল-সবুজের সেই পতাকা হাতে হাতে তুলে ধরেন জিলা স্কুলের কয়েক শ নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থী।

লাল–সবুজের পতাকা তুলে ধরে নবীন-প্রবীণেরা বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী শহীদ গোলাম মোহাম্মদ পাইকার খোকন, শহীদ টিটু, দোলন, মাসুদ, সাইফুল, চিশতি হেলালুরসহ মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে শুক্রবার সকাল ১০টায় বগুড়া জিলা স্কুল মাঠের মাঝখানে এই বিশাল পতাকা মেলে ধরা হয়। এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে সেখানে ভিড় করেন অনেক সাধারণ মানুষ ও দর্শনার্থীরা। বিশাল বড় এই জাতীয় পতাকা প্রদর্শন উপলক্ষে স্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে প্রদর্শিত হয় স্বাধীনতাসংগ্রামের নানা দলিলপত্র।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে বগুড়া জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এই বিশাল পতাকা প্রদর্শনের উদ্যোগ নেয়। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশে এটি কাপড়ের তৈরি সর্ববৃহৎ জাতীয় পতাকা বলে দাবি করেছে আয়োজকেরা।

বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাহিয়ান বিন মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ১৩ হাজার ৫০০ বর্গফুটের লাল–সবুজ রঙের বিশাল জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৯০ ফুট।

১৫ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর তত্ত্বাবধানে জিলা স্কুল মাঠে বিশাল এই পতাকা তৈরির কাজ চলে দরজি রানা মিয়ার নেতৃত্বে। এতে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য ও সোয়া তিন ফুট প্রস্থবিশিষ্ট ৪৭ থান সবুজ রঙের কাপড় এবং ১৭ থান লাল রঙের কাপড় ব্যবহৃত হয়।

সকাল ১০টায় জিলা স্কুলের নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিশাল আয়তনের লাল–সবুজের পতাকা তুলে ধরেন। আয়োজনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে লাল–সবুজের বিশাল পতাকা প্রদর্শনের এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। যত দূর জেনেছি, মুক্তিযুদ্ধে বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনন্য অবদান রয়েছে। এই স্কুলের সুনাম, ঐতিহ্য ও ইতিহাস গর্ব করার মতো। বিদ্যালয়ের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির এমন দিনে জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সর্ববৃহৎ পতাকা প্রদর্শনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটা প্রশংসনীয়। এই উদ্যোগ রেকর্ডভুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা প্রদান করবে জেলা প্রশাসন।’

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয় চত্বরে থাকা শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী থমসন হল সংরক্ষণের দাবি জানানো হয় জেলা প্রশাসকের কাছে। জেলা প্রশাসক থমসন হল সংরক্ষণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা। তিনি বলেন, ‘বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বৃহৎ পতাকা প্রদর্শনের যে অনন্য আয়োজন করেছেন, এটি শুধু বগুড়া জিলা স্কুলের ইতিহাসে নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসেও স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এমন একটি ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে আমি নিজেও গর্বিত। আগামী দিনেও এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা আরও নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে চমৎকার কাজ করে অনন্য উদহারণ গড়বে। জেলা পুলিশ সব সময় শিক্ষার্থীদের যেকোনো উদ্যোগের পাশে থাকবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ, জেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক আরশাদ সায়ীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান, বগুড়া জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রেজাউল বারী ঈশা, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতারুজ্জামান হিরু, জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ডা. সামির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ সায়ীদ বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সবচেয়ে বড় পতাকা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এক অনন্য উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বগুড়া জিলা স্কুলের সুনাম ও গৌরব আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে।