জাফলংয়ে পাথর তুলতে গিয়ে কিশোর শ্রমিক নিহত

নিহত
প্রতীকী ছবি

পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত সিলেটের জাফলংয়ের ডাউকি নদের পাশ থেকে যন্ত্র দিয়ে পাথর তুলতে গিয়ে এক কিশোর শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ওই শ্রমিকের বাবা-ভাই ও বোন। আজ শনিবার বিকেলে জাফলংয়ের ডাউকি নদের মন্দিরেরজুম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম পলাশ আহমদ (১৬)। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি আহত অবস্থায় তার বাবা মঙ্গল মিয়া, ভাই ভুট্টো মিয়া ও এক বোনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ইসিএ ঘোষিত জাফলংয়ে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাথর তুলতে গিয়ে শ্রমিক হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে। পলাশ তার মা–বাবা ও পরিবারকে নিয়ে জাফলংয়ের মেলার মাঠ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিল। তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে।

পাথর তুলতে গিয়ে ওই কিশোর শ্রমিক নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছেন তার বাবা-ভাই ও বোন।

পুলিশ ও পাথরশ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে পলাশ আহমেদ তার ভাই ভুট্টোকে নিয়ে জাফলংয়ের ডাউকি নদের মন্দিরেরজুম এলাকায় পাথর উত্তোলন করতে পানিতে গভীর একটি গর্ত করে। বিকেল পাঁচটার দিকে গর্তের পাশে বারকি নৌকার একটি বোমা মেশিন স্থাপন করে গর্ত থেকে পাথর উত্তোলনের চেষ্টা চালায়। এ সময় অসতর্ক অবস্থায় বোমা মেশিনের ধাক্কা লেগে পলাশ নৌকা থেকে পড়ে যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গর্তে পড়েন বাবা মঙ্গল মিয়া, ভাই ভুট্টোসহ তিনজন। আশপাশের এলাকার শ্রমিকেরা গিয়ে গর্ত থেকে পলাশকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিটন রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠান।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাফলংকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা হয় ২০১২ সালে। সেই প্রজ্ঞাপন জারি হয় ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে বালু ও পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা বন্দোবস্ত কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। বালু ও পাথর উত্তোলনও বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির উন্নয়নে জাফলংয়ে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডাউকি নদ থেকে আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১১টি মৌজা নিয়ে মোট ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইসিএ। ঘোষিত এলাকার মধ্যে জাফলংয়ের ডাউকি নদও পড়েছে।

স্থানীয় লোকজনেরা জানান, ইসিএ নির্দেশনা অনুযায়ী, জাফলংয়ে বালু-পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ হলেও প্রভাবশালী পাথর ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাথরশ্রমিকেরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের চেষ্টা করেন। পলাশ যে বোমা মেশিনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিহত হয়েছে, সেটি জাফলংয়ের পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।

ওই কিশোর শ্রমিক যে বোমা মেশিনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিহত হয়েছে, সেটি জাফলংয়ের পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেনের বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।

তবে মো. ইমরান হোসেন দাবি করেন, বোমা মেশিনের মালিক তিনি নন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি তাঁরা সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশকে জানিয়েছেন।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আহাদ বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।