জাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, আহত ২৫

স্থানীয়দের হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯ ফেব্রুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংলগ্ন গেরুয়া এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা চলছিল। ঘটনা চলাকালে স্থানীয়দের দিক থেকে অন্তত নয়টি গুলির শব্দ শোনা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, কয়েক দিন আগে ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্থানীয় কয়েক যুবকের ঝামেলা হয়। ওই ঝামেলা মিটমাট করতে আজ বিকেলে স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে আলোচনা করতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। আলোচনা চলাকালে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গেরুয়া বাজারের একটি ভবনে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডল, কার্যনির্বাহী সদস্য এলেক্সসহ তিনজন আহত হন। এ সময় শিক্ষার্থীদের পাঁচটি মোটরবাইক ভাঙচুর করেন স্থানীয় লোকজন।

এরপর রাত সাড়ে সাতটার দিকে গেরুয়া এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয়দের লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার আহ্বান জানানো হয়। এরপরই স্থানীয় লোকজন গেরুয়া বাজারে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জড়ো হন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েক শ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গেরুয়া ফটকে অবস্থান নেন। তাঁরাও লাঠিসোঁটা, রড নিয়ে পাল্টা ধাওয়া দিতে থাকেন।

পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলাকালে রাত আটটার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা গেরুয়া বাজারে আটক আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন। পরে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী গেরুয়া ফটকে অবস্থান নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯ ফেব্রুয়ারি
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেস ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। এর মধ্যে শুধু গেরুয়া এলাকায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী থাকেন। কয়েক শ শিক্ষার্থী বসবাস করেন বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন আমবাগান ও ইসলামনগর এলাকায়। সংঘর্ষের ঘটনার পরও গেরুয়া এলাকার মেস ও বাসাবাড়িতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আটকা আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় তাঁদের অনেকে ফেসবুকে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। পুলিশ আনার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। রাস্তায় সমস্যা থাকায় তাদের আসতে দেরি হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহবুব বলেন, সেখানে অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।