জাবিতে হলে অবস্থান শিক্ষার্থীদের, আইনি ব্যবস্থার হুমকি প্রশাসনের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক
ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে আবাসিক হলে অবস্থান করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার দুই দফা চেষ্টা করেও তাঁদের হলছাড়া করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও হল প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাঁরা ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় থাকতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই তাঁরা হলেই অবস্থান করবেন। আর প্রশাসন বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। এরপরও হল না ছাড়লে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। সেই সময় থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ হয়ে যায়। আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা চলে যান। তবে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে যেসব শিক্ষার্থী থাকতেন, তাঁদের অনেকেই সেসব বাসায় অবস্থান করে আসছিলেন। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে আবাসিক হলের তালা ভেঙে সেখানে অবস্থান করতে শুরু করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬টি আবাসিক হল রয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের ৮টিতেই ছাত্ররা থাকছেন। গত শনিবার ছাত্রীদের আটটি হলের তালা ভাঙা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেগুলোয় তালা লাগিয়ে দেয়। গতকাল বেলা পৌনে একটার দিকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ২০ থেকে ২৫ জন আবাসিক ছাত্রী হলটির তালা ভেঙে আবারও সেখানে ওঠেন। বিকেলে প্রক্টরিয়াল টিম ও হলের প্রাধ্যক্ষ সেখানে গিয়ে ছাত্রীদের হল ছেড়ে যেতে অনুরোধ করলেও তাঁরা তাতে সাড়া দেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বশেষ অবস্থান জানতে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি খুদে বার্তা পাঠানোর কথা বলে খুদে বার্তা পাঠান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা জানতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালে তিনি এর কোনো উত্তর দেননি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বারবার হল ছাড়ার অনুরোধ করছি, অনুরোধ করে যাব। তাতেও কাজ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এরপরও কাজ না হলে রাষ্ট্রীয় আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবব আমরা।’

দুই দফায় অনুরোধ প্রত্যাখ্যান

শনিবার তালা ভেঙে ঢোকার পর শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনা আসে গত রোববার মধ্যরাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সকাল ১০টার মধ্যে তালা ভেঙে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ে হল না ছাড়ায় সভা শেষে দুপুর ১২টার দিকে ছেলেদের আটটি হলে যান হলের প্রাধ্যক্ষসহ হল প্রশাসন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে যেতে বলেন। গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার সময় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ বা জমায়েত করা যাবে না, এমন সিদ্ধান্তের কথা শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দেন। ছাত্ররা তখন হল ছেড়ে না যাওয়ার কথা জানিয়ে দেন।

এই পরিস্থিতিতে বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো রেজিস্ট্রার ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আবাসিক হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে সভা করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। সভা শেষে আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষরা আবারও হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার আহ্বান জানান। কিন্তু এবারও তাঁরা তাঁদের আগের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকেন।

শিক্ষার্থীরা যা বলছেন

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের পরও যাঁরা বাড়ি যাননি, তাঁরা মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি এই এলাকায় তাঁদের অনেকেই টিউশনি করান। অনেকে আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজও করেন। আয় থেকে পড়াশোনার খরচ যেভাবে আসে, অনেকে আবার পরিবারকেও পাঠান। এত দিন তাঁরা ভাড়া বাসায় থেকেই সেই কাজ করে আসছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না।

ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাবিয়া ইসলাম করোনাভাইরাস পরিস্থিতেও টিউশনি চালিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক জব্বার হলের আবাসিক এই শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধের পর পার্শ্ববর্তী ইসলামনগরে কয়েক বন্ধু মিলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। গেরুয়া গ্রামের সংঘর্ষের পর তিনিও হলে উঠেছেন। তিনি বলেন, গেরুয়ার ঘটনার পর ইসলামনগরকেও তাঁদের নিরাপদ মনে হচ্ছে না। তাই ভয়ে তাঁরা হলে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।