জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ২৪ শয্যার বিপরীতে ভর্তি ১৪২

রোগীর সঙ্গে তিন–চারজন করে স্বজন আসছেন। এতে ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন হাসপাতালের এক নার্স
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে হঠাৎ শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ঠান্ডা-জ্বর, আবার অনেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। এ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২৪টি। কিন্তু আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪২।

শয্যার তুলনায় ছয় গুণ বেশি রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। শয্যাসংকটের কারণে অধিকাংশ রোগীকেই হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রচণ্ড গরম আর বাড়তি রোগীর ভিড়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীর স্বজনেরা।

আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও এর সামনের বারান্দার মেঝে রোগীতে ঠাসা। সিঁড়ির পাশেও গাদাগাদি করে কয়েকটি বিছানা ফেলা হয়েছে। ওয়ার্ডের ভেতরেও পা ফেলার মতো জায়গা নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৮ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। ইসলামপুর থেকে আসা মনোয়ারা বেগম দুই মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে বারান্দার মেঝেতে আছেন। তিনি জানান, ঠান্ডাজনিত সমস্যার কারণে আজ সকালে হাসপাতালে তাঁর শিশুসন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন। কোনো শয্যা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে বিছানা করে আছেন। তবে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনি কোনো চিকিৎসককে দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মঈন উদ্দিন জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর ছেলের জ্বর। তবে কোনো উন্নতি না হওয়ায় চার দিন আগে তাঁর সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ওয়ার্ডে কোনো বেড খালি নেই। এত রোগীর ভিড় যে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবাও পাওয়া যাচ্ছে না। দিনে একবার সকালে চিকিৎসক আসেন। তারপর আর তাঁদের পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

শয্যাসংকটের কারণে অধিকাংশ রোগীকেই হাসপাতালের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জেলায় জ্বর, সর্দি ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে এ হাসপাতালে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মৌসুমি আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং কয়েক দিন থেকে অত্যধিক গরমের কারণে শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স সুলতানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, এত রোগীকে একসঙ্গে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটি ওয়ার্ডে সাত থেকে আটজন নার্স থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে দুজন নার্সকে এত রোগী সামলাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা রোগীর সঙ্গে তিন–চারজন করে স্বজন আসেন। এ কারণে ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।

সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে শিশু রোগীর চাপ বেশি। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট রয়েছে। এরপরও সব রোগীকে যথাযথভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ভালো চিকিৎসা দেওয়ার কারণে বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগীরা এ হাসপাতালে ছুটে আসেন। তবে যেসব ছোটখাটো ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।