জামালপুরে গোপন কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নৌকার সমর্থকেরা, বিএনপির ভোট বর্জন

গোপন কক্ষে ভোট দিতে ঢুকেছেন এক ভোটার। সেখানে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থক। আজ রোববার সকালে জামালপুর শহরের রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
ছবি: আব্দুল আজিজ

কেন্দ্র দখল, বেশির ভাগ কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া, গোপন কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ও প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে জামালপুর পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। আজ রোববার বেলা ১টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তিনি ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেন।

জামালপুর জেলায় এই প্রথম ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ থাকলেও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নৌকার মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের একক আধিপত্য দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জামালপুর শহরের রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট নেই। একই সঙ্গে ওই কেন্দ্রের চারপাশে তাঁর কোনো সমর্থকদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুরো কেন্দ্রটি নৌকা প্রতীক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে। একই সঙ্গে ভোট গ্রহণের গোপন কক্ষও তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। ভোটারদের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের গোপন কক্ষে যেতেও দেখা গেছে। পরে নৌকার ভোট নিশ্চিত করা হয়।

একই অবস্থা জাহেদা শফির মহিলা কলেজ কেন্দ্রেও লক্ষ করা যায়। প্রত্যেক ভোটারদের সঙ্গে গোপন কক্ষে নৌকার কর্ম-সমর্থকদের দেখা যায়। একই অবস্থা ছিল সিংহজানি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও। কোথাও ধানের শীষ প্রতীকের কোনো কর্মী-সমর্থকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এ সময় কয়েকজন ভোটার তাঁদের নাম গোপন রেখে প্রথম আলোকে বলেন, আগের ভোট এখন আর নেই। নৌকা প্রতীকের ভোট দিলেই কেন্দ্রে যাওয়ার সাহস করা যায়। ভোট তো এখন নিজের ইচ্ছায় দেওয়া যাচ্ছে না। ইভিএমে তাঁদের এই প্রথম ভোট দেওয়া। কিন্তু আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর নৌকার ভোট নিয়ে নেওয়া হয়। তবে কাউন্সিলরদের ভোট দিতে পেরেছেন তাঁরা।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতির সঙ্গে প্রহসন করছে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসন। সব কেন্দ্রে প্রশাসন থাকলেও তারা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। প্রতিটি কেন্দ্রে গোপন কক্ষে নৌকার সমর্থক ও কর্মী বাহিনীরা গিয়ে ভোটারদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর নৌকায় ভোট নিয়ে নিয়েছেন। শুধু একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। কোথাও তাঁদের দাঁড়াতেও দেওয়া হয়নি। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এজেন্ট ও সমর্থকদের বের করে দিয়েছে। দু–একটি কেন্দ্রে তাঁর এজেন্ট ঢোকার চেষ্টা করলেও তাঁদের মারধর করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের একই অবস্থা ছিল। রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

ওয়ারেছ আলী বলেন, ‘আমি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলি, জামালপুর পৌরসভার মতো একইভাবে ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনেও গোপন কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নৌকার ভোট নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তিনি এই কারচুপির নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় ভোটের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে জামালপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জামালপুর পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।