জাল কাগজে গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা—অভিযোগ আ.লীগ নেতার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। জাল কাগজ তৈরি করে স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মোতালিব চৌধুরীর বিরুদ্ধে গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার লিখিতভাবে এই অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। তিনি বলেন, আবদুল মোতালিব জাল কাগজ তৈরি করে বিশেষ মহলের সহযোগিতায় গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।

আবদুল মোতালিব নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের খারগর গ্রামের বাসিন্দা। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দেন আল মামুন সরকার। স্থানীয় ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদও তাঁর বিরুদ্ধে অমুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ তোলে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আবদুল মোতালেব চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তান সরকারের অধীনে সিলেটের সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় কো-অপারেটিভ (সমবায়) কার্যালয়ে ৯ মাস কর্মরত ছিলেন। ১০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের খারঘর গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়। সে সময় অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে স্বজনদের খোঁজে তিনি নিজ গ্রাম নবীনগরের বড়াইলে আসেন। ২০১০ সালে কিছু জাল কাগজ তৈরি করে মহলবিশেষের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হন তিনি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমীন তদন্ত করে আবদুল মোতালিবের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ যাচাই-বাছাই ফরম ঘেঁটে দেখা যায়, যাচাই-বাছাই ফরম নম্বর ১৭৭৪৬। সেই ফরমে মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের নাম উল্লেখ করেছেন আবদুল মোতালেব চৌধুরী।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল মোতালিব অমুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ বা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। আমি তাঁর গ্রুপ কমান্ডার ছিলাম না। এবারের যাচাই-বাছাইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আরও কয়েকজনের নামে অমুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ উঠেছে। আর নবীনগরের যাচাই-বাছাই তালিকার প্রায় ৯৫ শতাংশই অমুক্তিযোদ্ধা।’

অভিযোগের বিষয়ে আবদুল মোতালিব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি এখনো ভাতা পাচ্ছি।’ আল মামুন সরকারকে যুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সিলেটে যুদ্ধ করেছিলাম।’ এরপর তিনি সংযোগটি কেটে মুঠোফোন বন্ধ করে ফেলেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে আবদুল মোতালিবের অমুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিলের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাঁর ভাতা বন্ধ রেখে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে নির্দেশ দেন।

উপজেলায় ২৬৩ জনের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ, সহমুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করা হবে। পরে কমিটি তাঁদের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ জানুয়ারি থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। আবদুল মোতাবিলের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।