জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ১ জুন শুরু

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদন আগামী ১ জুন শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে এ আবেদন চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। প্রাথমিক আবেদনে নির্বাচিত ভর্তি-ইচ্ছুকেরা ২৪ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত প্রথম ধাপে এবং ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করতে পারবেন।

আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আবু হাসান প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভর্তি পরিচালনা কমিটির পঞ্চম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুই দফায় অনলাইন আবেদন

আবু হাসান বলেন, চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন দুই দফায় নেওয়া হবে। প্রথম দফায় ৫৫ টাকা ফি দিয়ে ভর্তি–ইচ্ছুকদের প্রাথমিক আবেদন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত পর্বে আবেদনের জন্য নির্বাচিত হবেন ভর্তি-ইচ্ছুকেরা। চূড়ান্ত পর্বে আবেদনকারীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। প্রাথমিক পর্বে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ১০টি ইউনিটে মোট ১ লাখ ৮ হাজার জনকে নির্বাচিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ভর্তি-ইচ্ছুকদের চূড়ান্ত দফায় পুনরায় আবেদন করতে হবে। চূড়ান্ত দফার প্রথম ধাপের আবেদন চলবে ২৪ থেকে ২৯ জুন। ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে আবেদনপ্রক্রিয়া চলবে।

কোন ইউনিটে কতজন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদ (এ ইউনিট) এবং জীববিজ্ঞান অনুষদে (ডি ইউনিট) প্রাথমিক পর্বে আবেদনের যোগ্যতা এইচএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ–৪.০০। সমাজবিজ্ঞান (বি ইউনিট), কলা ও মানবিক অনুষদে (সি ইউনিট) আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ–৩.৫০। এই চার ইউনিটের প্রতিটিতে ১৮ হাজার জন করে মোট ৭২ হাজার জন ভর্তি-ইচ্ছুক প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হবেন। চার ইউনিটে চূড়ান্ত পর্বে আবেদনের জন্য প্রতিটিতে ১ হাজার ১০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। সি১ ইউনিটে (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব এবং চারুকলা) আলাদাভাবে আরও সাড়ে চার হাজার জন নির্বাচিত হবেন। এই ইউনিটে আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ–৩.৫০।

এ ছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে (ই ইউনিট) আবেদনের যোগ্যতা বিজ্ঞান শাখা থেকে জিপিএ–৪.০০ এবং মানবিক ও বাণিজ্য শাখা থেকে জিপিএ–৩.৫০। আইন অনুষদে (এফ ইউনিট) জিপিএ–৪.০০। এই দুই ইউনিটে ৯ হাজার করে ১৮ হাজার জন ভর্তি–ইচ্ছুক চূড়ান্ত আবেদনের জন্য নির্বাচিত হবেন।

ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জি ইউনিট) আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা এইচএসসিতে জিপিএ–৪.০০। ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিতে (এইচ ইউনিট) জিপিএ–৪.০০ এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে (আই ইউনিটে) জিপিএ–৩.৫০। এই তিন ইউনিটে চূড়ান্ত দফায় আবেদন করতে পারবেন সাড়ে ৪ হাজার করে মোট ১৩ হাজার ৫০০ জন।

পাঁচ ইউনিটের চূড়ান্ত পর্বে আবেদনের জন্য প্রতিটিতে ৭০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হয়নি

ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) আমির হোসেন বলেন, করোনা মহামারির কারণে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। অনলাইনে আবেদনের সব প্রক্রিয়া শেষ হলে মহামারির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের মতো শিফটভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে গত বছরগুলোতে প্রতি শিফটে ৯ হাজার জন করে ভর্তি–ইচ্ছুক পরীক্ষায় অংশ নিতেন। চলতি বছর প্রতিটি শিফটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মোট ৪ হাজার ৫০০ জন করে ভর্তি-ইচ্ছুক অংশ নিতে পারবেন। পরিস্থিতি বুঝে সময়ানুযায়ী অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভর্তি পরীক্ষার ফি বাড়ানো ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত করায় প্রতিবাদ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি ও বাছাই করার নামে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আজ শুক্রবার সকালে পৃথক বিবৃতিতে তারা এ প্রতিবাদ জানায়। ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তুষার ধর ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হকের স্বাক্ষর ছিল। আর ছাত্র ফ্রন্টের বিবৃতিতে স্বাক্ষর ছিল সভাপতি শোভন রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদের।

বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত শিক্ষা খাত। দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন যাপন করছেন শিক্ষার্থীরা। একদিকে মানসিক চাপ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক চাপ—সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিপন্ন। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটি ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করে প্রতি ইউনিটে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ইনস্টিটিউটগুলোর জন্য ৭০০ টাকা ধার্য করেছে। আগের বছরও এই ফি ছিল যথাক্রমে ৬০০ ও ৪০০ টাকা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বছর করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে। তার ওপর ভিত্তি করে যদি আবার বাছাই করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়, এটা একদিকে যেমন তাঁদের প্রতি অবিচার করা হবে, অন্যদিকে অহেতুক জটিলতায় অনেক যোগ্য শিক্ষার্থীরও পরীক্ষা দিতে না পারার আশঙ্কা তৈরি হবে।

এ অবস্থায় ভর্তি ফরমের মূল্য সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা এবং ফলাফলের ভিত্তিতে বাছাই করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটি।