জুড়ীতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ওঠায় সরবরাহ বন্ধ

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের বিভিন্ন স্থান তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। আশপাশের বাড়িঘরেও পানি উঠে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছেন মানুষছবি: কল্যাণ প্রসূন

বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জুড়ী নদীর দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ওঠায় গতকাল শনিবার রাত থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর এলাকায় জুড়ী নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে ভাঙনকবলিত স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকতে শুরু করলে ওই এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে যায়। এ ছাড়া গতকাল শনিবার রাতে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের মন্ত্রীগাঁও এলাকায় জুড়ী নদীর বাঁধ ভেঙে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েন।

সরেজমিনে আজ রোববার সকালে দেখা গেছে, জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের রানীমোড়া এলাকায় অবস্থিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উপকেন্দ্র পাঁচ থেকে সাত ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। স্থানটি পরিদর্শনে আসা পিডিবির কুলাউড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণি জানান, উপকেন্দ্রটি ঝুঁকিতে থাকায় গতকাল শনিবার রাত আটটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জুড়ীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পানি না কমা পর্যন্ত উপকেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হবে না।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার রানীমোড়া এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপকেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার রাত থেকে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে
ছবি: কল্যাণ প্রসূন

রানীমোড়া ও পাশের বীরগোয়ালী এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়ায় কেউ কেউ পরিবারের সদস্য ও গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছিলেন। রানীমোড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরো কোমরপানি। সকাল থাকি আরও বাড়ছে। বউ-বাচ্চারে আত্মীয়বাড়ি পাঠাই দিছি। আমি ঘর পাহারা দিই।’
এলাকাবাসী বলেন, জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের রানীমোড়া, কাপনাপাহাড় চা-বাগান, সমাইবাজার ও হাফিজি এলাকা চার-পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সাগরনাল ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সানাউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাঁধ ভেঙে ও উজানের ঢলে তাঁর এলাকার অন্তত এক হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।

সদর জায়ফরনগর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ও পশ্চিম জুড়ীর চেয়ারম্যান আনফর আলী বলেন, বর্ষণ অব্যাহত থাকায় তাঁদের এলাকায় পানি বেড়েই চলেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন উঠেছেন। তবে ঘরে ধান ও গবাদিপশু থাকায় তা ফেলে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি হচ্ছেন না।

উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রতন কুমার অধিকারী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনসুর আলী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আজ রোববার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন। আজ বেলা ৩টার দিকে রতন কুমার অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪৩টি পরিবার উঠেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া শুকনা খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।