জেলা প্রশাসনের বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার

নেত্রকোনার দুর্গাপুর শহরে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবিতে ব্যবসায়ীদের ডাকা চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে তাঁরা দোকানপাট খুলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। এর আগে ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান। এ সময় পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. তাজুল ইসলাম দেওয়ান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুল ইসলাম, দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম, কলমাকান্দার ইউএনও মো. সোহেল রানা, দুর্গাপুর উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি রইছ উদ্দিন, পাঁচটি ঘাটের ইজারাদার ও তাঁদের প্রতিনিধিসহ নানা-শ্রেণি পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. তাজুল ইসলাম দেওয়ান প্রথম আলোকে জানান, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে আন্দোলনকারী, ইজারাদার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সবার অংশগ্রহণে কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পৌর শহরের ভেতর দিয়ে কোনো ধরনের বালুবাহী ট্রাক বা লরি চলাচল করতে পারবে না, হর্ন বাজানো যাবে না। ভেজা বালু পরিবহন ও উত্তোলন করা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। বালু ব্যবসায়ীদের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন শহরের ভেতরে ট্রাক বা লরি থেকে রাস্তায় পড়ে থাকা বালু পরিষ্কার করতে হবে। এসব বিষয় দেখার জন্য ইজারাদার, বণিক সমিতির প্রতিনিধি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আর ইউএনও সার্বিক বিষয়ে তদারকি করবেন।

বুধবারের মধ্যে ইজারাদারেরা একত্রে বসে শহরের ভেতর দিয়ে যাতে কোনো ধরনের বালু পরিবহন করতে না হয়, সে জন্য তাঁরা নদীর তীর দিয়ে ডাইভারশন (বিকল্প পথ) করে বালু পরিবহন করবেন বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা জানান, ‘জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় আমরা দোকানপাট খুলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছি। কিন্তু সিদ্ধান্তগুলো যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হয় তবে এবার পৌর বাসিন্দাদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা, বণিক সমিতি ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলা প্রশাসন থেকে সোমেশ্বরী নদীর পাঁচটি বালুমহাল প্রায় ৫৬ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর ঘাট বিজয়পুর থেকে ভবানীপুর ২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার অনুমোদন পান নেত্রকোনা-১ (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সাংসদ মোশতাক আহমেদ ওরফে রুহী। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাকস বিডি কোম্পানির নামে ইজারা নেন।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রতিটি ঘাটের ইজারাদারেরাই সরকার দলীয় ও প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো রকম নিয়ম-নীতি না মেনে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন ও সরবরাহ করে চলছেন। স্থানীয় প্রশাসনও তাঁদের বিষয়ে নীরব। ইজারাদারেরা স্থানীয় লোকজনের সুবিধা-অসুবিধার গুরুত্ব দেন না। ওই পাঁচটি ঘাটে বালু ব্যবসায়ীরা সহস্রাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে দিন-রাত কর্কশ শব্দে বালু উত্তোলন করছেন। এতে এলাকার সহস্রাধিক বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, সেতু, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ছে।

১ ও ২ নম্বর ঘাটের উত্তোলন করা বালুভর্তি সব ট্রাক দুর্গাপুর শহরের প্রধান সড়কসহ অন্যান্য সড়ক দিয়ে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভেজা এসব বালুর ট্রাক থেকে পানি পড়ে নবনির্মিত পাকা সড়কটি কাদায় একাকার হয়ে আছে। প্রতিদিন শহরের ওই সব সড়ক দিয়ে সহস্রাধিক ভেজা বালুর ট্রাক চলাচল করছে। এতে একদিকে যেমন শহরে যানজট হচ্ছে ও সব রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, অন্যদিকে কাদা ছিটে ব্যবসায়ীদের দোকানপাটের মালামাল ও পথচারীদের পোশাক নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করলেও কাজ হয়নি।

গত রোববার পৌর শহরের সব দোকানপাট বন্ধ রেখে ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন এবং ইউএনও কার্যালয় ঘেরাওসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ নিয়ে সোমবার প্রথম আলোতে ‘দুর্গাপুরে ব্যবসায়ীরা ধর্মঘটে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।