জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য আর শিক্ষা-সংস্কৃতি তুলে ধরতে নানা প্রকাশনা

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রকাশনা ‘অগ্নিস্বাক্ষর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান
ফাইল ছবি

‘আমের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে একের পর এক প্রকাশনা বের করছে জেলা প্রশাসন। বঙ্গবন্ধু, জেলার মুক্তিযোদ্ধা, আম, ঐতিহ্যবাহী ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পর্যটনসহ নানা বিষয়ের এসব প্রকাশনা প্রশংসা কুড়িয়েছে সুধীজনদের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক প্রশ্নোত্তরমূলক গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুকে জানি’, বঙ্গবন্ধুর বাণীসংবলিত বুক মার্ক, জেলার সব ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম-ঠিকানা, ছবি, স্বাক্ষর ও নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁদের চাওয়াসংক্রান্ত বাণী নিয়ে গ্রন্থ ‘অগ্নিস্বাক্ষর’, জেলার ২০টি শতবর্ষী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১০০টি পুরোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ও এসব বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করা কৃতী শিক্ষার্থীদের তথ্য নিয়ে ‘আমার বিদ্যালয়’, আম উৎপাদন নির্দেশিকা ‘আম’, বছরব্যাপী কার্যক্রম (আম পরিচর্যা-সম্পর্কিত), আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ‘আমের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি কলাকৌশল’ নিয়ে প্রকাশনা বের করেছে জেলা প্রশাসন। গত দেড় বছরে এসব প্রকাশনা বের করা হয়।

সর্বশেষ জেলার ঐতিহ্য নিয়ে বের করা হয়েছে ভ্রমণ নির্দেশিকা ‘চলো বেড়াই চাঁপাই’। তৈরি করা হয়েছে জেলাভিত্তিক পর্যটন অ্যাপস ‘দূরে কোথাও’। বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলার এক দশকের (২০০৯-২০১৯) উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে ‘উন্নয়ন চিত্রে’। এ ছাড়া প্রকাশের পথে রয়েছে নাচোলের তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্র স্মারক গ্রন্থ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন জাতের আম-সম্পর্কিত আমের অ্যালবাম।

নানা ধরনের এসব প্রকাশনার চিন্তা, তথ্য সংগ্রহ, নকশা ও পরিকল্পনার মূল দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ কে এম তাজকির-উজ-জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে মর্মস্পর্শী সব কাহিনি। প্রতিষ্ঠার পেছনের সেসব নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও শিক্ষকদের অবদান আজকের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার তরুণ-যুবকেরা জানেন না। তাঁদের মনে করিয়ে দিতে এবং তাঁদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ‘আমার বিদ্যালয়’ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এসব বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের তথ্য রয়েছে এই বইয়ে। আমরা এসব কৃতী শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাই, তাঁরা যেন নিজ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।’

আমার বিদ্যালয় বইয়ের প্রচ্ছদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার ১০৭ বছর বয়সী শংকরবাটী পোল্লাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার খাতুন বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরবর্তী সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও এনসিটিবির চেয়ারম্যান হয়েছেন। রয়েছেন দেশ-বিদেশে আরও নানা কৃতী শিক্ষার্থী। তাঁদের কথাসহ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে নিবেদিতপ্রাণ মানুষদের কথা এ বইয়ে স্থান পেয়ছে। এই বই হাতে পেয়ে আমরা আনন্দিত ও উৎসাহিত বোধ করছি।’

জেলার প্রতিনিধিত্বশীল আমচাষি ও শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার অ্যান্ড কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি শামীম খান প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে আম ও পর্যটন নিয়ে জেলা প্রশাসনের এমন প্রকাশনা দেখা যায়নি। এতে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। আমচাষিরা এতে দারুণ খুশি।

১২ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার ছবি, স্বাক্ষর ও তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বাণীসংবলিত ‘অগ্নিস্বাক্ষর’ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আইনজীবী আবদুস সামাদ বলেন, এ গ্রন্থে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্মস্পর্শী সব বাণী রয়েছে। ব্যয়বহুল এ প্রকাশনায় মুক্তিযোদ্ধারা খুশি। তাঁরা সম্মানিতও বোধ করছেন।