জেলেটিনের হাতবোমা আর যেমন ছিল বাঘা অপারেশন

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মর্টার ছিল না। তারা শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করার জন্য জেলেটিনের সমন্বয়ে হাতবোমা তৈরি করেন, যা মর্টারের মতোই শব্দ হয়।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলেও এত বছর পর মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের মনে ‘বাঘা অপারেশন’ শিহরণ জাগায়। মুক্তিযোদ্ধারা অক্ষত থেকে ১৩টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও একটি পয়েন্ট ৩২ ক্যালিবারের পিস্তলসহ ১১ জন রাজাকারকে জীবিত অবস্থায় আটক করেছিলেন। ওই অপারেশনে পাকিস্তানি রেঞ্জার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বল করে সেই অভিযান। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলী। পরে তিনি বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার আলী এবং ওই অভিযানের গাইড মুহাম্মদ শফিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাকিস্তানি রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনী বাঘা মাদ্রাসায় ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। আজাদ আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা খারিজা থাক ক্যাম্প থেকে পদ্মা নদী পার হয়ে বাঘায় এসে বাবু চন্দ্র পান্ডে ও বাবু শিশির কুমার পান্ডের পরিত্যক্ত বাড়িতে ওঠেন।

অভিযানের দিনটি ছিল শুক্রবার। রাতে পাকিস্তানিদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালানো হয়। যুদ্ধের প্রধান সমন্বয়কারী আজাদ আলী মুক্তিযোদ্ধাদের দলকে তিন ভাগে ভাগ করেন। ১ নম্বর দলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি নিজে। বাকি ২ নম্বর দলের দায়িত্বে ছিলেন নাজির উদ্দিন আহম্মেদ ও মোজাম্মেল হক।

পাকিস্তানি বাহিনী তাদের অবস্থান শক্ত করার জন্য সাতটি বাংকার খনন করেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ২ ইঞ্চি বা ৩ ইঞ্চি মর্টার ছিল না। তাই তাঁরা শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করার জন্য জেলেটিনের সমন্বয়ে হাতবোমা তৈরি করেন, যা বিস্ফোরিত হলে ২–৩ ইঞ্চি মর্টারের মতো বিকট শব্দ হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ নম্বর দল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আনসার আলী প্রথমে ফায়ার শুরু করেন। তখন শত্রুপক্ষ রাতের খাবার খেতে ব্যস্ত। প্রথম গুলি ছোড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপর দুই গ্রুপ থেকে গুলি ছোড়া শুরু হয়। একটানা ২-৩ ঘণ্টা গুলি চলতে থাকে। এরই ফাঁকে ফাঁকে দু-একজন করে রাজাকার আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে।