জেলেপল্লিতে শিশুদের জন্য স্কুল ও পাঠাগার

শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য খেলাধুলা, শিক্ষণীয় সিনেমা, নাটক দেখানো ও বিভিন্ন ধরনের উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়।

পাঠাগারে বই পড়ছে শিশুরা। সম্প্রতি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার চর ভোলমারা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

২০১৭ সালে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক পাস করেন মো. রুবেল মিয়া (২৭)। পড়াশোনা শেষে বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নদীর তীরে ঘুরতে গিয়ে দেখতে পেলেন জেলেপল্লির শিশুরা মাছ ধরছে। অনেক শিশু বিদ্যালয় না গিয়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। রুবেল মিয়া জেলে পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। শিশুদের পড়াশোনার খোঁজখবর নিলেন। ভাবলেন, এসব শিশুদের জন্য কিছু করা যায় কিনা। ২০১৮ সালের ১৭ই মার্চ দুই বন্ধু মিলে গড়ে তুললেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাতেখড়ি ফাউন্ডেশন। এরপর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার চর ভোলমারা গ্রামে শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রাইডে স্কুল ও উপকূল পাঠাগার।

হাতেখড়ি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্কুলে শিশুদের পাঠদান করার পাশাপাশি পাঠাগারে গল্পসহ মজার মজার বই পড়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া অভিভাবক ও পড়াশোনায় অমনোযোগী শিশুদের কাউন্সেলিং করে বিদ্যালয়মুখী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফ্রাইডে স্কুল থেকে শিশুদের পড়া বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা দেওয়া হচ্ছে কম্পিউটার ব্যবহার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে। শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য খেলাধুলা, শিক্ষণীয় সিনেমা, নাটক দেখানো ও বিভিন্ন ধরনের উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। জেলে জনগোষ্ঠীর শিশুদের কল্যাণে কাজ করায় সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় হাতেখড়ি ফাউন্ডেশন ২০২০ সালে অর্জন করে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড।

হাতেখড়ি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. রুবেল মিয়া জানান, অনেক অভিভাবক আছেন, যাঁরা তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। পড়াশোনার চেয়ে সন্তানেরা অর্থ উপার্জন করলে সংসার ভালোভাবে চলবে। সেসব অভিভাবক ও তাঁদের সন্তানের পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে নানা রকম কাউন্সেলিং করে থাকেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। গত সাড়ে তিন বছরে শতাধিক শিশুকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করা সম্ভব হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনো বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। পাঠ্যবই পড়তে একঘেয়ে আসে। আস্তে আস্তে অমনোযোগী হয়ে পড়ে পড়াশোনায়। এদিক বিবেচনা করে গড়ে তোলা হয়েছে উপকূল পাঠাগার। সেখানে শিশুরা পরিচিত হচ্ছে ল্যাপটপ, ট্যাব, প্রজেক্টরের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে।

ফ্রাইডে স্কুলে পাঠদান করেন সুমন চন্দ্র মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘আমরা শিশুদের মধ্যে রঙিন ছাতা, টিফিন বক্স ও পানির পাত্র বিতরণ করছি। আমাদের রয়েছে এক টাকার মিনি মার্কেট। শুভেচ্ছা মূল্য এক টাকার বিনিময়ে শিশুরা কিনতে পারে তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষার উপকরণ।’

চর ভোলমারা গ্রামের জেলে মো. বেল্লাল জানান, তাঁর ছেলে জুনায়েদ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। কয়েকজন যুবক তাঁর ছেলেকে ছাতা, টিফিন বক্স উপহার দেয়। এরপর তাঁরা ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর কথা বলে। এখন সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।