জেলেপল্লির মারুফা পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ, অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেধাবী শিক্ষার্থী মারুফা। গতকাল বৃহস্পতিবার মারুফা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

দারিদ্র্য আটকাতে পারেনি মৎস্যজীবী পরিবারের মেয়ে মারুফা খাতুনকে। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ৭৪ স্কোর নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে অভাব–অনটনের কারণে কলেজে ভর্তি হওয়ার খরচ জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি।

মারুফা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামের মৎস্যজীবী আজিত বিশ্বাস ও তাসলিমা বেগমের মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে সবার বড় মারুফা তালার শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি ও তালা মহিলা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

মারুফা খাতুন জানান, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তাঁদের পরিবারের। বাবা নদীতে জাল টেনে মাছ ধরেন। খুব কষ্ট করে পড়িয়েছেন তাঁকে। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন, তবে ভর্তির টাকা বাবার কাছে নেই। এই টাকা জোগাড় করার সামর্থ্যও বাবার নেই। একজন বড় ভাই বলেছেন, ভর্তি হতে ২০-২২ হাজার টাকা লাগবে।

নিজের স্বপ্নের বিষয়ে মারুফা আরও বলেন, ‘আমি একজন ভালো ডাক্তার হতে চাই, গরিব মানুষকে সেবা করতে চাই। ভালো মানুষ হওয়া আমার স্বপ্ন।’

মারুফার বাবা আজিত বিশ্বাস জানান, তিন মেয়ের মধ্যে বড় মারুফা। মেজ মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট মেয়েটা এখনো স্কুলে যায় না। মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে মেয়েকে পড়িয়েছেন। নদীতে মাছ ধরে প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা আয় করেন। তা দিয়ে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। মেয়েটা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। পড়ানোর খরচ চালানোর মতো তাঁর সামর্থ্য নেই। সবার সহযোগিতা ছাড়া মেয়েকে পড়ানো সম্ভব হবে না।

মারুফার মা তাসলিমা বেগম জানান, এক শতক জমির ওপর আধা পাকা দুটি ঘর ছাড়া কিছুই নেই তাঁদের। মেয়েকে কীভাবে মেডিকেলে ভর্তি করবেন, আর কীভাবে পড়াবেন, তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। একপর্যায়ে বলেন, ‘আল্লাহ জানেন, ওর পড়া হবে কি হবে না।’

তালা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম জানান, ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তালা মহিলা কলেজের কৃতী ছাত্রী মারুফা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার মেরিট পজিশন ৩৫৩৪। তাদের কলেজ থেকে সুপ্রিয়া রায়ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তারা পড়াশোনা শেষ করে দেশ ও দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবে, এটাই তাঁর প্রত্যাশা।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের স্টুডেন্ট বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর আসাফুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেলে ভর্তির জন্য ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। ভর্তির টাকাসহ দুই বছরের বেতন একসাথে ২০ হাজার টাকা। গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় অধ্যক্ষের নির্দেশনায় সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন হাজার টাকা কম রাখা হয়।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল কুদ্দুস বলেন, গরিব কোনো শিক্ষার্থীকে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে একাডেমিক কাউন্সিল থেকে সামান্য কিছু সুযোগ নিতে পারবে গরিব শিক্ষার্থীরা। এখনো মেডিকেলে ভর্তির কোনো দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি।