জেলের জালে বিরল ‘টিয়া মাছ’

মনির মাঝি নামে এক জেলের জালে বিরল প্রজাতির এ মাছটি ধরা পড়ে।
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে একটি বিরল প্রজাতির মাছ ধরা পড়েছে। জেলেরা মাছটিকে ‘টিয়া মাছ’ বলছিলেন। মনির মাঝি নামের এক জেলের জালে বিরল প্রজাতির এ মাছটি ধরা পড়ে। পরে তিনি মাছটি মাছ ব্যবসায়ী ও কলাপাড়া পৌর শহর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ ওরফে মাসুমকে উপহার দেন।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাছটি scaridae পরিবারের। এর বৈজ্ঞানিক নাম scaridae cetoscarus. স্থানীয়ভাবে মাছটি প্যারট ফিশ বা টিয়া মাছ বা নীল তোতা নামে পরিচিত। বাংলাদেশে মাছটি বিরল। এ মাছ ভারত মহাসাগরে বেশি পাওয়া যায়। তবে দক্ষিণ চীন সাগরের ফিলিপাইন উপকূল পর্যন্ত এর বিচরণ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার (২৬ আগস্ট) সকালে রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝির জালে মাছটি ধরা পড়ে। ট্রলারের জেলে মনির মাঝি জানান, সাগরে ইলিশ মাছ ধরার জন্য জাল ফেলেছিলেন। পরে জাল যখন ওঠানো হয়, তখন ইলিশ মাছের সঙ্গে এ মাছটিও উঠে আসে। পরদিন বৃহস্পতিবার (২৭ আগষ্ট) বিকেলে কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর মৎস্য বন্দরের টিমন মৎস্য আড়তে গেলে আড়তের মালিক মাছটি দেখে কিনতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় এ আড়তেই মাছ বিক্রি করি। এ কারণে আমি আড়তের মালিকের কাছ থেকে মাছটির জন্য কোনো টাকা নেইনি। তাঁকে উপহার হিসেবে মাছটি দিয়েছি।’

উপহার পাওয়া ব্যক্তি দিদারউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাছটি পাওয়ার পর আড়তে বরফ দিয়ে রেখেছিলাম। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বরফ থেকে বের করে মাছটি খাওয়ার জন্য বাসায় নিয়ে যাই।’ তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘মাছটি উপহার পেলেও একা খেতে পারিনি। ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু এ মাছের খবর জেনে যান। এ কারণে রান্না করে বন্ধুদের জন্য মাছ পাঠাতে হয়েছে।’তিনি জানান, মাছটি খেতে খুব সুস্বাদু ছিল। মাছের মুখের দিক গোলাকৃতির। দেখতে টিয়া পাখির মতো। ওজন দুই কেজি।

মাছটি প্রসঙ্গে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, scaridae পরিবারের ৯৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। বাসস্থান ও খাদ্য আহরণের জন্য এরা রকি বা পাথুরে দ্বীপ, কোরাল রিফ, শক্ত তলদেশযুক্ত সামুদ্রিক অঞ্চলে বসবাস করে। পাথরে জন্মানো শৈবাল খাদ্য হিসেবে পছন্দ করে এই প্রজাতির মাছ। মাছটি বিচ্ছিন্নভাবে বঙ্গোপসাগরে এসে পড়েছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। মাছটি খেতে সুস্বাদু। খাওয়ার বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

কামরুল ইসলাম আরও বলেন, এ প্রজাতির মাছ পাথুরে আবরণ থেকে শেওলা খেতে অভ্যস্ত। শেওলার সঙ্গে ক্যালসিয়াম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করায় মাছটির আঁশ খুব মজবুত ও পুরু হয়। শক্ত তলদেশ বা কোরাল রিফ থেকে শেওলা খেতে এরা অভ্যস্ত হওয়ায় এ মাছের দাঁত শক্ত হয়। মাড়ি থাকে মোজাইকের মতো মসৃণ। এ মাছ সাধারণত ১২ থেকে ২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক দশমিক ৩ মিটার বা ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। মাছগুলোর দেহে তোতা পাখির মতো নীল ছোপ ছোপ দাগ এবং লেজের মাঝখানের অংশ উজ্জ্বল সোনালি-হলুদ রঙের হয়।