জোয়ারের উচ্চতা কমছে

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর জোয়ারের উচ্চতা আজ রোববার কিছুটা কমেছে। এ কারণে লোকালয় ও উঁচু এলাকায় জোয়ারের পানি ঢোকেনি। এতে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। তবে এদিনও অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তারা বলেছেন, আজ বরিশাল বিভাগের সব কটি নদ-নদীর পানি ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কমেছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে।

তলিয়ে যাওয়া উঠানে গৃহস্থালি কাজ করছেন মমতাজ বেগম। বরগুনার তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙ্গা গ্রামে
মোহাম্মদ রফিক

স্থানীয় লোকজন জানান, আজ বেলা তিনটার দিকে কীর্তনখোলা নদে জোয়ার আসতে শুরু করে। এ সময় পানি বিপৎসীমার অন্তত ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যায়। একই সময় বরগুনা ও পটুয়াখালীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পায়রা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালী নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার ও বামনায় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

বরিশাল সদর উপজেলার কীর্তনখোলার তীরের চরবাড়িয়া গ্রামের লাল মিয়া সরদার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বলেন, আজ বিকেল চারটার দিকে কীর্তনখোলায় জোয়ার শুরু হয়েছে। জোয়ারের গতি আগের কয়েক দিনের চেয়ে অনেক কম। তাই তাঁদের বাড়িঘরে আজ পানি ওঠেনি।

স্থানীয় লোকজন জানান, ১৬ আগস্ট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার শুরু হয়। এতে বরিশালসহ এ বিভাগের সব জেলার নিম্নাঞ্চল ছাপিয়ে উঁচু স্থান এমনকি শহর-বন্দর ও বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ে। জোয়ারে ভেসে যায় অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ। রোপা আমন ও আউশের খেতে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সবজি ও পানের বরজেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার কাজ শুরু হয়নি।

পানি ভেঙে চলাচল করছে মানুষ। ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর এলাকায়
নেয়ামতউল্যাহ

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দু-এক দিন লাগতে পারে। দু-একটি উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। চূড়ান্ত কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি।’

বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রায় বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি সরে গেছে। তবে এর প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে জলীয় বাষ্প আসছে। তা ছাড়া মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুই-তিন দিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। তা ছাড়া এখন অমাবস্যার সময়। এ সময় জোয়ার কিছুটা বেশি হয়। যেহেতু এখন বৃষ্টির মাত্রা বেশি, তাই দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ২ ফুট বেশি জোয়ার হতে পারে।

পাউবোর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সহকারী প্রকৌশলী জাভেদ আহমেদ আজ দুপুরে বলেন, ‘আশা করি, দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’