জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ নৌপথে ৮ মাস ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ীর জৌকুরা ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে আট মাস। এতে করে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পদ্মা পার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে করে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজবাড়ীর জৌকুরা ঘাটে আজ বুধবার তোলাপ্রথম আলো

রাজবাড়ীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের সহজ মাধ্যম রাজবাড়ীর জৌকুরা ও পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌপথ। কিন্তু পদ্মার এই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে আট মাস। এর ফলে জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ নৌপথে এখন ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পদ্মা পার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মূলত পণ্য পরিবহনের জন্য এই নৌপথ বেশি ব্যবহার করা হয়। এই নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন রাজবাড়ী ছাড়াও ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর বাস ও মালবাহী ট্রাক পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। এই নৌপথ ব্যবহার করলে অন্তত ১২০ কিলোমিটার সড়কপথ সাশ্রয় হয়। এই পথে বাস ও ট্রাক ছাড়াও মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যাতায়াত করে। তবে ঘাট বন্ধ থাকায় এসব যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করা হয়।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের নৌ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ নৌপথ। রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নে জৌকুরা ঘাট অবস্থিত। এই নৌপথে ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রয়েছে। ফেরি ছাড়াও দুটি লঞ্চ ও কয়েকটি ট্রলার এই নদীপথে যাতায়াত করে। করোনার কারণে মার্চ মাস থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। মাঝে একবার চালু করা হয়। কিন্তু সপ্তাহ না যেতেই নাব্যতা-সংকটের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে লঞ্চ ও নৌকা চলাচলের বিষয়টি সওজ দেখভাল করে না। ঘাট ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন।

জৌকুরা ফেরিঘাট এলাকায় সরেজমিনে আজ বুধবার দেখা যায়, বালুর চাতালের মধ্য দিয়ে ইট বিছানো প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তা। রাস্তার শেষ প্রান্তে কিছু ইজিবাইক, মাহিন্দ্র ও ঘোড়ার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে লঞ্চঘাট। এখান থেকে লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে। কিছু দূরে দুটি ইউটিলিটি ফেরি দাঁড় করিয়ে রাখা। লঞ্চ থেকে যাত্রীরা নেমে ঘোড়ার গাড়িতে বা হেঁটে আসছেন। লঞ্চে ওঠানামার জন্য বাঁশের মাচা পাতা রয়েছে। মাচার শুরুতে বালুর বস্তা ফেলা। বস্তার ওপরে পানি ওঠায় জুতা বা স্যান্ডেল খুলে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ লাফিয়ে পার হচ্ছেন। এরপর ইজিবাইক বা মাহিন্দ্রে যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ঘোড়ার গাড়িতে জনপ্রতি সাধারণত ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আর সেখান থেকে ইজিবাইকে ৩০ টাকায় রাজবাড়ী শহরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

জৌকুরা–নাজিরগঞ্জ নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে আট মাস। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পদ্মা পার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজবাড়ীর জৌকুরা ঘাটে আজ বুধবার তোলা
প্রথম আলো

মাদারীপুরের টেকেরহাট থেকে মোটরসাইকেলে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা ও আমার জন্য ৬০ টাকা ভাড়া আলাদাভাবে দিতে হচ্ছে। এই পথে গেলে অনেক পথ কমে যায়। এতে দুর্ভোগ হলেও এই পথ ব্যবহার করি। কিন্তু লঞ্চের অবস্থা ভালো না। এ কারণে খুব আতঙ্কে থাকতে হয়।’

স্কুলশিক্ষক শ্যামল কুমার প্রামাণিক বলেন, নৌপথের দূরত্ব তেমন না। প্রতিনিয়ত ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। নৌকাভাড়া ৬০ টাকা। ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। ঘোড়ার গাড়িতে যেতে হয় কারণ বালুর জন্য পায়ে হাঁটতে কষ্ট হয়। এরপর ইজিবাইক বা মাহিন্দ্রে যেতে হবে। সব ভাড়া নির্ধারণ করে রাখা। অথচ নৌকা ভাড়া আরও অনেক কমানো যেত।

শাহজাদপুরের বাজিয়াতপুর গ্রামের শ্রমিক আজিজুল ইসলাম সরদার ও আফসার সরদার কাজের খোঁজে যাচ্ছেন ফরিদপুর। তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘এইটুকু পথ ৬০ টাকা নৌকা ভাড়া। এক রেট। গেলে যাও না গেলে না যাও। গরিবের বিষয়টি কেউ দেখে না। এই ভাড়া কমালে আমাদের জন্য খুব ভালো হয়।’

সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাসার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘মার্চ মাস থেকে করোনার কারণে পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর পরিবহন চলাচল শুরু হলে ফেরি চলাচলও শুরু হয়। কিন্তু নদীতে নাব্যতা-সংকটের কারণে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ঘাট স্থানান্তর করেও ফেরি চালানো সম্ভব হয়নি। বর্তমান ঘাটে যানবাহন যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরিপ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হবে।’

এসব বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, ফেরি চলাচলের জন্য ঘাট ইজারা দেওয়া হয়। ওই নৌপথে লঞ্চ চলাচলের কথা নয়। আর ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।