জ্বর, শ্বাসকষ্টে এক মাসে ১০০টি ছাগলের মৃত্যু

বজলুর রহমানের ২৯টি ছাগল ছিল। গত কয়েকদিনে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ২৮টি ছাগল মারা গেছে। এখন একটি ছাগলই তাঁর সম্বল। শুক্রবার মির্জাগঞ্জের কাকড়াবুনিয়া গ্রামে
প্রথম আলো

‘কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েক দিনের ব্যবধানে আমার ২৭টি ছাগল মারা গেছে। আমি এখন পথের ফকির। অবশিষ্ট দুটি ছাগলও অসুস্থ।’ চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের কাকড়াবুনিয়া গ্রামের ৬০ বছর বয়সী বজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পায়রা নদীর ভাঙনে জমিজমা সবই গেছে। বাঁধের পাড়ে সামান্য জমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছি। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা (ঋণ) করে কয়েকটি ছাগল কিনে তা লালন–পালন করে বাজারে বিক্রি করে যে লাভ হতো, তা দিয়ে স্ত্রী, দুই কন্যাসন্তান নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল।’

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ছাগলের ভাইরাসজনিত পিপিআর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১ মাসে প্রায় ১০০টি ছাগলের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে সহস্রাধিক ছাগল। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গবাদিপশু পালনকারীরা। এ রোগ প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষের তেমন তৎপরতা নেই বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আর প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষের দাবি, ভ্যাকসিন–সংকট, ছাগল পালনকারীদের সচেতনতার অভাবসহ অন্যান্য রোগেও ছাগল মারা যাচ্ছে।

কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়নে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে জ্বর, পাতলা পায়খানা, মুখে ঘা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বজলুর রহমানের ২৭টি ছাগল, একই গ্রামের আবদুল বারেক হাওলাদারের ৪টি ও আবদুল ছাত্তার হাওলাদারের ৪টি, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের মহিষকাটা গ্রামের মো. শাহজাদার ৮টি ছাগল, মাধবখালী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মোনাসেফ আঁকনের বাড়িতে ৫টি ছাগল মারা গেছে।
ছাগল লালন-পালনকারী মো. বজলুর রহমান আরও বলেন, ‘অভাবের সংসার। তারপরও বাজার থেকে বাকিতে ছাগলের খাবার (ভুসি), ওষুধ কিনেছি। আশা ছিল, ছাগল বিক্রি করে সব ধারদেনা পরিশোধ করব। কিন্তু ছাগলগুলো মরে যাওয়ায় কীভাবে সংসারের খাবার জোগাবো আর কীভাবে অপরের দেনা শোধ করব, ভেবে পাচ্ছি না।’

উপজেলার কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়নের মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘পিপিআর রোগে গ্রামে প্রতিদিনই দু–একটি ছাগল আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। আমার জানামতে, এলাকায় গত ১ সপ্তাহে ১০-১২টি ছাগল মারা গেছে।’

ভ্যাকসিনের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবে গত সপ্তাহে ৪টি ভ্যাকসিন এসেছে, যা দিয়ে ৪০০ ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। শুধু পিপিআর রোগে নয়, কৃষকদের অসচেতনাসহ অন্যান্য রোগেও কিছু ছাগল মারা যাচ্ছে।
সঞ্জিব কুমার বিশ্বাস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মির্জাগঞ্জ

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার বিশ্বাস ভ্যাকসিন–সংকটের কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যাকসিনের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবে গত সপ্তাহে ৪টি ভ্যাকসিন এসেছে, যা দিয়ে ৪০০ ছাগলকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। শুধু পিপিআর রোগে নয়, কৃষকদের অসচেতনাসহ অন্যান্য রোগেও কিছু ছাগল মারা যাচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় বাসাবাড়িতে ও বিভিন্ন খামারে সাত-আট হাজার ছাগল লালন-পালন করা হয়ে থাকে। পিপিআর ছোঁয়াচে রোগ। অসুস্থ পশুর হাঁচি–কাশি, পায়খানার মাধ্যমে সুস্থ ছাগলের দেহে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া পানি, খাদ্যের পাত্র ও অসুস্থ প্রাণীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র দিয়েও রোগটি ছড়াতে পারে। এমনকি শরীরে জীবাণু আছে, কিন্তু রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়নি—এমন প্রাণীর মাধ্যমেও রোগটি অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ জন্য সুস্থ থাকা পশুকে আক্রান্ত পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। সরকার দেশ থেকে ছাগলের পিপিআর রোগ নির্মূলের জন্য একটি ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। খবর দিলেই মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে একজন কর্মী একটি ছাগলকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেবেন।