জয়পুরহাটে মেলায় লটারির নামে জুয়া খেলার অভিযোগ

জয়পুরহাট শহরে মাসব্যাপী হস্ত, বস্ত্র ও কুঠির শিল্প মেলায় লটারির নামে জুয়া খেলার অভিযোগ উঠেছে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাইকিং করে লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন টিকিট কিনছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। লটারির ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা।

শহরের স্টেডিয়ামে ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী এই মেলা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত মেলায় স্টল রয়েছে ৪৮টি। বিনোদনের জন্য রয়েছে সার্কাস। এর পাশাপাশি প্রতিদিন লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মোটরসাইকেল, রঙিন টেলিভিশন, ইজিবাইক, সোনার গয়নাসহ একাধিক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘দৈনিক মন মাতানো র‌্যাফল ড্র’ নাম দিয়ে লটারির কার্যক্রম চলছে। শুধু মেলা প্রাঙ্গণ নয়, শহরের অলিগলি, গ্রামগঞ্জে লটারির টিকিট বিক্রির হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে মিনি ট্রাক, ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যানে মাইকিং করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। শতাধিক লোক এসব যানবাহনে টিকিট বিক্রি করছেন। প্রতিটি টিকিটের দাম ২০ টাকা। বিক্রীত টিকিট থেকে তাঁরা কমিশন পান। একেকজন প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টিকিট বিক্রি করেন। এ হিসাবে দিনে অন্তত ২০ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়। জেলা ক্রীড়া সংস্থা মনতাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে মেলা ইজারা দিয়েছে। বিনিময়ে ক্রীড়া সংস্থাটি প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা পাচ্ছে।

গত শুক্রবার সকালে শহরের নতুনহাট এলাকার সরদার পাড়ার রাস্তায় ইজিবাইকে মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করছিলেন গোলাম রসুল নামের এক ব্যক্তি। কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ তাঁর সামনে ভিড় জমিয়েছেন। সবাই একাধিক টিকিট কিনছেন। গোলাম রসুল বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করি। প্রতি টিকিট থেকে এক টাকা কমিশন পাই। টিকিট বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’

সেখান থেকে তিনটি টিকিট কিনেছেন সরদার পাড়ার দিনমজুর রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, যদি কিছু পাওয়া যায়। মোটরসাইকেল পাওয়ার আশায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তানভির আল রাফী কিনেছে ছয়টি টিকিট।

>পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন টিকিট কিনছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। লটারির ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা

শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদ চত্বরে রিকশায় বসে টিকিট বিক্রি করছেন আবদুস সালাম। কী কী পুরস্কার আছে, গেল রাতে কারা পুরস্কার পেয়েছেন, তা মাইকে ঘোষণা করে টিকিট বিক্রি করছেন তিনি। সেখানে মাকে সঙ্গে নিয়ে টিকিট কিনছেন পাঁচবিবি উপজেলার আয়মা রসুলপুর গ্রামের মাদ্রাসাপড়ুয়া দুই ভাই ফাহিম ও মাহিম।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মেলায় কথা হয় ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা গ্রামের ভ্যানচালক দুলাল হোসেনের সঙ্গে। ভ্যান চালানোর আয় থেকে প্রতিদিন ২০০ টাকার ১০টি টিকিট কিনছেন তিনি। এখনো তাঁর কোনো পুরস্কার জোটেনি। একই উপজেলার জালিয়াপাড়া গ্রামের সোহাগ হোসেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। মেলার প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন ৫টি করে টিকিট কিনছেন। তিনিও কোনো পুরস্কার পাননি। তাঁরা দুজন বলেন, গত বুধবার তাঁদের এলাকার এক ব্যক্তি লটারিতে মোটরসাইকেল পেয়েছেন। এরপর এখানে টিকিট বিক্রির হিড়িক পড়েছে।

উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে টিকিট বিক্রি করায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। শহরের মাড়োয়ারি পট্টি এলাকার বাসিন্দা সুলতান আলম মোল্লা গত শনিবার বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। বেশ কিছুদিন থেকে বাসার কাছে রাস্তার মোড়ে মাইক বাজিয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে পড়াশোনার মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

লটারিসহ মেলার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন মো. মন্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তি। গতকাল রোববার মুঠোফোনে তিনি বলেন, ক্রীড়া সংস্থাকে টাকা দিয়ে তাঁরা এ মেলা পরিচালনা করছেন। খরচ বাদে তাঁদের সামান্য কিছু লাভ থাকে। মেলার ইজারাদার মনতাজ উদ্দিনের বাড়ি দিনাজপুরে। এর বেশি কিছু জানাতে তিনি রাজি হননি।

মেলা কমিটির আহ্বায়ক নন্দলাল পার্শী বলেন, মেলায় জুয়া খেলা হয় না। তবে র‌্যাফল ড্রতে যদি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রয়োজনে লটারি বন্ধ রাখা হবে।

জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মো. আবদুর রহিম বলেন, উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো বন্ধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে খোঁজখবর নিয়ে লটারিও বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনোভাবেই পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটতে দেওয়া হবে না।