ঝালের মতো এবার দাম মিলছে না ‘শিটি মরিচের’

মরিচ তুলে এনে রাস্তার পাশে পাইকারের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার জগতপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

এক ফুট উচ্চতার গাছে চকচকে হালকা সবুজ রঙের মরিচ। মরিচের ভারে যেন নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। চিকন আকৃতির একেকটি মরিচ লম্বায় ৫-৭ ইঞ্চি। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘শিটি মরিচ’ হিসেবে পরিচিত। দেখতে যেমন সুন্দর, ঝালও বেশ।

এই মরিচের দেখা মিলবে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের জগৎপুর, রানীপুকুর, মির্জাপুর, কুকড়িবন ও কামদেবপুর এলাকায়। চাহিদার পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা এই মরিচ চাষে আগ্রহ দেখান। তবে চলতি মৌসুমে কাঁচা মরিচের দাম কম থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।

সাধারণত শ্রাবণ মাসের শুরুতে এই মরিচের বীজ বপন করা হয়। আশ্বিনের শুরুতে তুলনামূলক উঁচু জমিতে চারা লাগানো হয়। আড়াই মাস পর, অর্থাৎ অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়ে মরিচ বাজারজাত করার উপযোগী হয়ে ওঠে। তিন দফায় মরিচ তোলা হয় পৌষ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে মরিচ পাকা অবস্থায় বিক্রি করতে হলে কৃষককে অপেক্ষা করতে হয় মাঘ মাস পর্যন্ত।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে জগৎপুর, রানীপুকুর ও কামদেবপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে যত দূর চোখ যায় শিটি মরিচের খেত। কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউবা নিড়ানি। নারী শ্রমিকেরা মরিচ তুলতে ব্যস্ত। খেতের পাশে বস্তা আর ডিজিটাল পাল্লা নিয়ে বসেছেন পাইকার। নগদ টাকায় মরিচ কিনছেন, বস্তায় ভরছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে মরিচ কিনতে এসেছেন পাইকাররা।

জগৎপুর এলাকায় পাইকারের কাছে মরিচ বিক্রি করতে আসা চাষি আবদুস সালাম (৫২) বলেন, এবার তিনি আড়াই বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়েছেন। বর্ষা দেরিতে শেষ হওয়ায় মরিচ লাগাতে দেরি হয়েছে। ফলনেও ঘাটতি। গতবার বিঘাপ্রতি ৬০ মণের বেশি মরিচ তুলেছেন। দামও পেয়েছিলেন প্রতি কেজি ৭০-৮৫ টাকা। এবার ৫০ মণের বেশি মরিচ পাবেন না। এবার প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি করতে পারছেন মাত্র ২৭ টাকায়।

আবদুস সালামের ভাষ্য, প্রতি বিঘা জমিতে মরিচ চাষে বীজ বাবদ ৫০০ টাকা, চাষ ৩ হাজার ৫০০ টাকা, সার (ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ, ড্যাপ) ৮ বস্তা ৬ হাজার ৮০০ টাকা, সেচ ১ হাজার ৫০০ টাকা, কীটনাশক ৭ হাজার টাকা, রোপণ বাবদ ৬ হাজার, তিনবার নিড়ানি বাবদ ২০ হাজার টাকা, মরিচ তোলা বাবদ ৭ হাজার টাকাসহ ৫২ হাজার ৩০০ টাকা খরচ হয়।

রানীপুকুর এলাকার হবিবর রহমান (৬৫) বলেন, ‘২৫ কাঠা মাটিত মরিচ লাগাইছি। গেলবার ভালো দাম পাইছি। এবার দাম নাই। শুনোছি ভারত থাকি মরিচ আসোছে। দেশি মরিচের চাহিদা নাই। দাম কম কহেচে। বাব–দাদা এই মরিচের চাষ করি গেইছে। প্রতিবছর নিজেরাই বীজ রাখি। বীজ কিনবার হয় না। এ রকম দাম হইলে আগামীতে আর মরিচ আবাদ করা যাবি না। তা–ও ভালো মরিচ খেতে অনেকেই সাথি ফসল হিসেবে বেগুনসহ অন্য শাকসবজি লাগাইছে।’

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, চলতি মৌসুমে ৪০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় শিটি মরিচের আবাদ হয়েছে। শুকনা অবস্থায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন মেট্রিক টন। তুলনামূলকভাবে এই মরিচের রোগবালাই কম। শিটি মরিচের আবাদ এই এলাকায় ঐতিহ্যগতভাবে চলে আসছে। তবে কৃষি বিভাগের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে এই মরিচ চাষ করছেন কৃষকেরা। মরিচ খেতে সাথি ফসল ফলানোতে উৎসাহ প্রদান করায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।