ঝাড়ফুঁক দিয়ে চলে চিকিৎসা

নান্দাইল উপজেলার বীরকামটখালী গ্রামের এক কিশোর কবিরাজ তিন মাস ধরে এভাবে অপচিকিৎসা দিচ্ছে। এই চিকিৎসায় রোগীর ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।

ময়মনসিংহের নান্দাইলের কিশোর কবিরাজ এক শিশুর শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করছে। গত শনিবার উপজেলার বীরকামটখালী গ্রামেছবি: প্রথম আলো

পেটব্যথা, ক্যানসারসহ সব রোগের চিকিৎসা হয় ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া দিয়ে। চিকিৎসার নামে এই অপচিকিৎসা চলছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীরকামটখালী গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের বাড়িতে। আর এই কবিরাজি করছে তাঁর ১৪ বছরের এক ছেলে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, এভাবে চিকিৎসা করালে রোগীর ভালো হওয়ার চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

যেকোনো রোগ সেরে যাচ্ছে—কবিরাজের স্বজনদের এমন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত লোকজন শফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভিড় করছেন। কবিরাজ সকাল-বিকেল পালা করে ঝাড়ফুঁকসহ নানা পদ্ধতিতে নানা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অপচিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে।

গত শনিবার বিকেলে বীর বেতাগৈর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের পশ্চিম দিকে অবস্থিত শফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে মানুষের জটলা দেখা যায়। জটলার মধ্যে শফিকুলের ছেলে চেয়ারে বসে বিড়বিড় করছে। বিড়বিড় করা শেষ হলে ছোট একটি ঝাড়ু হাতে নিয়ে লোকজনের শরীরে ছোঁয়াচ্ছে। রোগীরা বোতলে পানি ও তেল নিয়ে এসেছেন। কিশোর কবিরাজকে সেসব বোতলের মুখ খুলে ফুঁ দিচ্ছে। কবিরাজের ডান পাশে একটি চেয়ারের ওপর একটি কাঠের বাক্স রাখা। ঝাড়ফুঁক শেষ হওয়ার পর ওই বাক্সে লোকজনকে টাকা রাখতে দেখা যায়।

শফিকুলের এ বক্তব্য সমর্থন করেন তাঁর এক আত্মীয় আবদুল মজিদ। মজিদ জানান, ছেলেটাকে জিনের হাত থেকে ফেরত পাওয়া গেছে কবিরাজি করার শর্তে। শফিকুলের আরেক আত্মীয় সিরাজ মিয়া বলেন, তাঁর পেটব্যথার জন্য হৃদয় মিয়া একটি তাবিজ দিয়েছিল। সেটি কোমরে পরলে তাঁর পেটব্যথা দূর হয়ে যায়। হৃদয় মিয়ার কবিরজিতে ক্যানসার ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী পর্যন্ত ভালো হয়ে যাচ্ছে।

নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা ইমদাদুল মাগফুর মুঠোফোনে বলেন, ঝাড়ফুঁক একটি কুসংস্কার। এতে কোনো রোগ ভালো হয় না বরং রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

শফিকুলের বাড়ি অপচিকিৎসা চললেও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে ইউএনও মোহম্মাদ আবুল মনসুর বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। এ ধরনের অপচিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।