পাথরঘাটায় ঝুঁকিপূর্ণ ১২ গ্রামে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই

বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর তীরবর্তী চরদুয়ানী ও পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে ৪১ হাজার মানুষের জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ২২টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ধারণক্ষমতা সাড়ে ১৪ হাজার।

নদীর তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এসব গ্রামে আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্ষা মৌসুম আসতে পাঁচ-ছয় মাস বাকি রয়েছে। তবে এখনই উদ্যোগ না নিলে বর্ষা মৌসুমের আগে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এতে ওই গ্রামের আরও ২৬ হাজার ৫০০ মানুষ ঝুঁকিতে আছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আরিফুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকা অতিঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খুবই প্রয়োজন। নদীর তীরবর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র করার মতো অবস্থা থাকে না। নদীভাঙন রোধে নির্দেশনা রয়েছে। তবে বেড়িবাঁধের বাইরে জমি পেলে বা ওই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমিতে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র করা যেতে পারে।

নদীর তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি গ্রামে আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।

  • ১২ গ্রামের ৪১ হাজার মানুষের জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ২২টি।

  • কেন্দ্রগুলোর ধারণক্ষমতা সাড়ে ১৪ হাজার। ঝুঁকিতে আছে ২৬ হাজার ৫০০ মানুষ।

বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার নিশ্চিত করতে পাথরঘাটায় সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন। ওই সংস্থার উপজেলা ব্যবস্থাপক ইসমাইল হোসেন বলেন, পাথরঘাটা সদর ও চরদুয়ানী ইউনিয়নের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি গ্রামে প্রয়োজনীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও জরাজীর্ণ। গ্রামগুলোতে নারী ও শিশুবান্ধব আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। তাহলে গ্রামের নারী ও শিশুরা সেখানে যেতে উৎসাহী হবে।

ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, সম্প্রতি বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা হয়েছে। তাঁরা ১২টি গ্রামে প্রয়োজনীয় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি করেছেন।

সুশীলন সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম পদ্মা, চরলাঠিমারা, বাদুরতলা, গহরপুর, রূহিতা ও বড়টেংরায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৭টি। চরদুয়ানী ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম ছোটটেংরা গাববাড়িয়া, তাফালবাড়িয়া, কালিয়ারখাল, ইকরবুনিয়া ও চরদুয়ানীতে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে পাঁচটি।

বলেশ্বরের তীরবর্তী রূহিতা গ্রামের বাসিন্দা আবুবকর দুলাল বলেন, নদীতে স্রোতের শব্দ শুনলেই এ এলাকার মানুষের ঘুম হয় না। প্রয়োজনীয় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় দুর্যোগের সময় সেখানে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। বিশেষত নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করেন। ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৩ বছর পরও এ অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

বলেশ্বর নদের তীরবর্তী আরেকটি গ্রাম ইকরবুনিয়া। ওই গ্রামের বাসিন্দা সুরমা আক্তার বলেন, গত বছর নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে এই গ্রামে ঘরচাপা পড়ে একই ঘরের দাদি ও নাতি দুই ব্যক্তি মারা যান। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ওই দাদি ও নাতি ঘর থেকে বের হননি। ঘূর্ণিঝড়ের সময় এ গ্রামের মানুষের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ ব্যাপারে ইউএনও সাবরিনা সুলতানা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ওই ১২টি গ্রামে প্রয়োজনের তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।