ঝুঁকিপূর্ণ ৩৩ কিলোমিটার

কামারখালী থেকে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পর্যন্ত প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১৪ মাসে নিহত ৩৬ জন।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুরের কামারখালী থেকে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় পর্যন্ত প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১৪ মাসে সড়কের ৩৩ কিলোমিটারে অন্তত ১৭টি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন।

দুর্ঘটনার স্থান ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে আড়পাড়া, বাগাট, মালেকা চুক্ষু হাসপাতাল, বিসিক এলাকা, তেঁতুলতলা ও ফরিদপুর সদরের গঙ্গাবর্দী এলাকা। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মধুখালীর দিঘুলিয়া থেকে ফরিদপুর সদরের মল্লিপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার।

এ সম্পর্কে ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরীয়ার রুমি বলেন, সড়কের ওই অংশে নির্মাণজনিত কোনো ক্রটি নেই। মূলত চালকেরা ট্রাফিক আইন ঠিকমতো মানেন না। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা ঘোষণার সাইনবোর্ডের দিকে নজর না দেওয়া এবং লিংক সড়ক থেকে মহাসড়কে ওঠার সময় দুই দিকে পর্যাপ্ত নজরদারি না করার জন্য দুর্ঘটনা বাড়ছে। সবার মধ্যে আগে যাওয়ার কেমন যেন একটা অশুভ প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ মাসে ওই ৩৩ কিলোমিটারে ১৭টি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর বাইরেও ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে, যা পুলিশের নথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

সবশেষ গত রোববার সকালে মাঝকান্দিতে একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পরিবারের ছয় সদস্যসহ নয়জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। পুলিশ বলছে, মাইক্রোবাসটির গতি বেশি ছিল। মাইক্রোবাসটি ভুল পথে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত বছর ৬ জানুয়ারি সড়কের মল্লিকপুর এলাকায় একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে নিহত হন ছয়জন। তাঁরা সবাই ঘটনাস্থলে মারা যান।

সড়কের এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশ। মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশের সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের ঊর্ধ্বগতি ও ওভারটেক একটি বড় সমস্যা। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার বেশি গতিতে চলাচল করে। বেশি গতিতে চালিয়ে অন্য গাড়িকে অতিক্রম করে। ওভারটেক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ।

ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জোবায়ের জাকির বলেন, সড়কের ওই অংশে বেশ কয়েকটি বাঁক রয়েছে। এ ছাড়া লিংক সড়ক থেকে মূল সড়কে ওঠার সময় অনেক চালক সতর্ক থাকেন না, এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, একসময় ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ ছিল। হয়ে উঠেছিল মৃত্যুপুরী। ওই সড়কটির বিপজ্জনক বাঁকে সড়ক ডিভাইডার করে দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই সড়কে দুর্ঘটনা অনেক কমে গেছে। ফরিদপুরে এই দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়কে এ রকম পদক্ষেপ নিলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশের সুপার মোস্তাফিজুর রহমানও এই প্রস্তাব ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবব। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলব। যান ও মাল রক্ষার জন্য কম খরচে এটি একটি বড় উপকার হতে পারে।’

প্রায় অভিন্ন কথা বলেছেন সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরীয়ার রুমি। তিনি বলেন, চার লেনের সড়ক করার পরিকল্পনা আছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির। চার লেন হলে দুর্ঘটনা কমে যাবে। সড়কটি চার লেন করার আগে রোড ডিভাইডারের প্রস্তাবটি নিয়ে ভাবা যেতে পারে।