‘টাকা ছিনিয়ে নিতেই অধ্যাপক সাইদা গাফফারকে হত্যা করা হয়’

সাইদা গাফ্ফার
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফারের ব্যাগে ১০ হাজার টাকার বান্ডিল ছিল। সেটি দেখে ফেলেছিলেন নির্মাণকাজের ঠিকাদার আনারুল ইসলাম (২৫)। সেই টাকা ছিনিয়ে নিতেই তাঁকে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা, দুটি মুঠোফোন এবং চাবি নিয়ে আনারুল তাঁর (সাইদা) ঘরে গিয়ে লুটপাট করে পালিয়ে যান।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজ রোববার এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদার হত্যার সঙ্গে জড়িত আনারুল। গতকাল শনিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক মেহিদী পাভেল তাঁর (আনারুল) তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে রোববার পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পানিশাইল এলাকায় ঝোপের ভেতর থেকে গত শুক্রবার সাইদা গাফফারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার থেকে তাঁর খোঁজ পাচ্ছিলেন না স্বজনেরা। এ ঘটনায় সাইদার ছেলে সাউদ ইফতেখার বিন জহির কাশিমপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার আসামি আনারুলকে গত শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার নিজ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মহানগর ডিবি ও কাশিমপুর থানা পুলিশের একটি দল। শনিবার তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দীপঙ্কর রায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় জানান, কাশিমপুরের পানিশাইল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি আবাসন প্রকল্প রয়েছে। সেখানে সাইদা গাফফারেও একটি প্লট রয়েছে। ওই প্লটে তিনি একটি একতলা বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন। কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসের ৩০ তারিখে ওই বাড়িতে ওঠার কথা ছিল। বাড়ি নির্মাণকালে তিনি পানিশাইল এলাকায় একটি বাড়িতে ফ্লাট ভাড়া নিয়ে কাজ দেখাশোনা করতেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে নির্মাণাধীন বাড়ির প্লট থেকে ১০ হাজার টাকায় পাঁচটি গাছ বিক্রি করেন সাঈদা গাফফার। গাছ কাটেন আনারুল।

গাছ কাটা শেষ হলে সন্ধ্যায় নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পানিশাইলের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন সাইদা। হাঁটার পথেই তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে গাছ কাটার জন্য আনারুলকে কিছু টাকা দেন। এ সময় তাঁর ব্যাগে ১০ হাজার টাকা দেখতে পান আনারুল। একটি নির্জন স্থানে পৌঁছালে ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আনারুল। টাকা নিতে বাধা দিলে তিনি শ্বাসরোধে তাঁকে হত্যা করেন। পরে সাইদার ভাড়া বাসায় গিয়ে আলমারি খুলে টাকাপয়সার খোঁজ করেন তিনি। পরে পালিয়ে শ্বশুরবাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী গিয়ে থাকেন। বুধবার সকালে তিনি নিজ বাড়ি একই জেলার সাদুল্যাপুরের জাউলিয়া গ্রামে গিয়ে আত্মগোপন করেন। শুক্রবার পুলিশ তাঁর খোঁজে ওই গ্রামে যায়। টের পেয়ে তিনি মোটরসাইকেলে করে পালানোর চেষ্টার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে সাইদার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ১০ হাজার টাকার মধ্যে ২ হাজার ৬৫০ টাকা এবং ফোন দুটি উদ্ধার করা হয়। তিনি মাদকাসক্ত এবং বখাটে।

মামলার বাদী সাউদ বিন ইফতেখার জহির জানান, গত মঙ্গলবার তাঁর মাকে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বোন মুঠোফোনে মেসেজ করেন। কিন্তু তাঁর মা মেসেজ না দেখায় পরদিন বুধবার ফোন করেন। ফোন বন্ধ থাকায় ঢাকার বড় বোন সাদিয়া আফরিন ও তাঁর মামা শেখ শমসের গাফ্‌ফার মায়ের পানিশাইলের বাসায় গিয়ে ঘরের দরজা ও আলমারি খোলা দেখতে পান। অনেক খুঁজেও মাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। ওই দিন রাতেই তাঁর বোন কাশিমপুর থানায় জিডি করেন। শুক্রবার পুলিশ আনারুলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যে শুক্রবার দুপুরে মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিবৃতি
সাইদা গাফফারের হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সাইদা গাফ্ফার হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারসহ যথাযথ শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে সাইদা গাফ্ফার হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করার দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এদিকে সাইদা গাফফারের হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতিও। সমিতির সভাপতি সালমা আলী হত্যা মামলাটির আইনগত সহায়তা প্রদানসহ তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।