টাকা দিয়েও মেলেনি বাড়ি

প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে গতকাল বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গৃহহীনদের মধ্যে বাড়ির দলিল বিতরণ করা হয়

দিনাজপুর জেলার মানচিত্র

দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের সরকারি জলমহাল চিলিম খাঁ দিঘির পাড়ে স্বামী–সন্তান নিয়ে বাস করেন বিউটি মার্ডি। তাঁর মতো উপজেলার ২১০ জন সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। গতকাল রোববার দলিল বুঝে নিতে উপজেলা মিলনায়তনে এসেছিলেন বিউটি।

ঘর পেয়ে বিউটি খুশি হলেও বিপরীত চিত্র ফাজিলপুর ইউনিয়নের বুড়িরহাট গ্রামে। এই গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, ঘর পেতে তাঁরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যকে ৭ থেকে ১০ হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘর মেলেনি।

গ্রামের পারুল বেগম বলেন, তিনি ৩৫ বছর খাসজমিতে ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। প্রকল্পের ঘর তৈরির সময় তাঁর বাড়িটি ভাঙা পড়ে। বিপরীতে তিনি দুই কক্ষের একটি বাড়ি পেয়েছেন। আরেকটি বাড়ির জন্য সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ইউপি সদস্য হবিবর রহমানকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘর পাননি।

বুড়িরহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ১০টি পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরি হচ্ছে। গত শনিবার নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকায় গেলে পারুলের মতো আরও কয়েকজন এমন অভিযোগ করেন। সেখানে বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছেন আক্তারুল ইসলাম। প্রকল্পের পাশেই তাঁর বাড়ি থাকলেও তিনি বাড়ি পেয়েছেন। একইভাবে বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বাড়ি পেয়েছেন সবুজ ইসলাম, রশিদা বেগম।

তবে রশিদার বক্তব্য, তাঁর পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি, তাই তিনি আরেকটি বাড়ির আবেদন করেছিলেন। এ জন্য ইউপি সদস্যকে দুই হাজার টাকা দেন। মাসুদ রানা নামের আরেকজন দেন সাত হাজার টাকা। ১৩ হাজার টাকা দেন রবিউল। ২০ হাজার টাকা দিলেও ঘর না পাওয়ায় টাকা ফেরত পেয়েছেন নাছিমা নামের একজন।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য হবিবর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই জায়গা খাল ছিল। মাটি ভরাটের জন্য কয়েকজনের কাছে দুই থেকে চার হাজার টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ঘর দিতে না পেরে টাকা ফেরত দিয়েছেন।

বাড়ি থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাড়ি পেয়েছেন, এ বিষয়ে হবিবর বলেন, বাবার বাড়ি আছে, ছেলের বাড়ি নেই, এমন কয়েকজন বাড়ি পেয়েছেন।

জেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স ও বাস্তবায়নের দুটি কমিটি আছে। টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সদস্যসচিব সহকারী কমিশনার (ভূমি)। কমিটিতে আছেন ভূমি জরিপকারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য। এ কমিটি প্রাথমিকভাবে উপকারভোগী নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে।

ফাজিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, বুড়িরহাটে ঘর বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়ে মুঠোফোনে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তদন্ত করবেন। আর সদর ইউএনও মর্তুজা আল মুঈদ বলেন, উপকারভোগীদের অনেক আগেই নির্বাচন করা হয়েছে। তিনি সদ্য এ উপজেলায় যোগ দিয়েছেন।

নতুন বাড়ি বরাদ্দ

আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের উপকারভোগীদের মধ্যে বাড়ির দলিল বিতরণ করা হয় গতকাল। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নীলফামারী জেলার বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে ১ হাজার ১০টি, পঞ্চগড়ে ৭১৫, কুড়িগ্রামে ১ হাজার ৭০, ঠাকুরগাঁওয়ে ২ হাজার ২৯৬, বগুড়ায় ৮৫৭, নাটোরে ১ হাজার ৩৮১, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৭০, সিরাজগঞ্জে ৪৮১, জয়পুরহাটে ১৪১ ও লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ৬৫টি বাড়ি বিতরণ করা হয়।