টাকার ব্যাগ না ছেড়ে চিৎকার করায় অধ্যাপক সাইদাকে হত্যা

অধ্যাপক সাইদা গাফ্‌ফার
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি আনারুল ইসলাম (২৫) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে বিচারকের সামনে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, আনারুলের স্ত্রী অসুস্থ। তাই টাকার প্রয়োজন ছিল। ঘটনার দিন সাইদা গাফফারের ব্যাগে টাকা দেখে কৌশলে জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তিনি ব্যাগ টেনে ধরেছিলেন। হাত থেকে ব্যাগ ছাড়িয়ে নিতে তাঁর হাতে কামড় দেন আনারুল। তারপরও ব্যাগ না ছাড়ায় ও চিৎকার করায় গলা টিপে ধরে এবং গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে তাঁর ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান আনারুল।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) ফাহিম আসজাদ প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ড শেষে আজ বিকেলে আসামি আনারুলকে গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মো. নিয়াজ মাখদুম ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

গাজীপুর নগরের পানিশাইল এলাকায় ঝোপের ভেতর থেকে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১১ জানুয়ারি থেকে তাঁর খোঁজ পাচ্ছিলেন না স্বজনেরা। এ ঘটনায় সাইদা গাফফারের ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির গাজীপুরের কাশিমপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার আসামি আনারুলকে গত শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার নিজ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) দীপঙ্কর রায়। আদালতের বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা চুল ও নিহত সাইদার হাতে কামড়ের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই নমুনা অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আনারুলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে কেনা নতুন জামাকাপড় জব্দ ও ২ হাজার ৬৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে নির্মানাধীণ বাড়ির প্লট থেকে ১০ হাজার টাকায় ৫টি গাছ বিক্রি করেন অধ্যাপক সাইদা গাফফার। গাছ কাটেন আনারুল ইসলাম। কাজ শেষে সন্ধ্যায় নির্মাণাধীণ বাড়ি থেকে পানিশাইলের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন সাইদা। হাঁটার পথেই তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে গাছ কাটার জন্য আনারুলকে কিছু টাকা দেন। এ সময় ব্যাগে ১০ হাজার টাকা দেখতে পান আনারুল। এরপর একটি নির্জন স্থানে পৌঁছালে জোর করে সাইদার ব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন আনারুল। বাধা দিলে তাঁর গলা টিপে ধরে হত্যা করেন। একপর্যায়ে গামছা গলায় পেঁচিয়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশটি একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেন।

আরও পড়ুন