টাকার মালা পরে জনপ্রতিনিধিদের ঘুরে বেড়ানো নিম্ন রুচির প্রকাশ

ঢাকার সাভারে ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পর থেকে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের জয়ী চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য ফুলের বদলে টাকার মালা পেয়েছেন। সেই মালা গলায় পরে তাঁরা ঘুরেছেন। এ বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কলামিস্ট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজের সঙ্গে।

অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ

প্রশ্ন :

এবারের ইউপি নির্বাচনগুলো কেমন দেখলেন?

এ কে এম শাহনাওয়াজ: পত্রপত্রিকা থেকে দেখেছি, নির্বাচন ঘিরে হানাহানি-মারামারি, রক্তের খেলা। অনেক প্রার্থী ছিলেন, যাঁদের মনোনয়ন পাওয়ার কথা নয়। শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্ব ছিল সঠিক প্রার্থী মনোনয়নের। তাঁরা সেটি কেন করেননি বা করতে পারেননি, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। এই না পারার কারণে তৃণমূলে দ্বন্দ্বটা বেড়েছে।

প্রশ্ন :

নির্বাচনে জয়ীদের গলায় টাকার মালা দেওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

এ কে এম শাহনাওয়াজ: এটা একটা অসুস্থতার প্রকাশ। এ রকম হওয়ার কথা নয়। এটা যখন হয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে অর্থ ও পেশিশক্তি দুটোই রাজনৈতিক নিয়ামক হয়ে যাচ্ছে। এটা যেন একটা উদাহরণ হিসেবে আমাদের সামনে চলে এল। তাঁরা বলেই দিলেন, আমাদের রাস্তাটা হবে যেকোনো উপায়ে অর্থ সংগ্রহ ও শক্তি সঞ্চয় করা।

প্রশ্ন :

এ ঘটনার কারণ কী?

এ কে এম শাহনাওয়াজ: এটার কারণ তো খুবই স্পষ্ট। এটা দেওয়ার মানে হচ্ছে একটা শক্তিশালী অপশক্তিকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া এবং প্রতিষ্ঠা দেওয়ার মানসিকতা। না হলে তো একজনকে স্বাগত জানানোর কত সুন্দর, শোভন পদ্ধতি আছে। সে পদ্ধতিতে আমরা যাচ্ছি না। একসময় যাত্রাপালায় দেখতাম, একজন ভালো অভিনয় করলে দর্শকেরা টাকা ছুড়ে দেন। গলায় টাকার মালার মধ্য দিয়ে অসুস্থ ও সংকীর্ণ একটা ছবি দেখতে পেলাম এখানে।

প্রশ্ন :

এ ঘটনা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আপনার মনে হয়?

এ কে এম শাহনাওয়াজ: অবশ্যই সমাজে একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে একটা ধারণা তৈরি হবে যে অর্থ ছাড়া নির্বাচন করা যায় না। যারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তারা জয়ীকে জানিয়েই দেবে, ভবিষ্যতে যখন তুমি নির্বাচন করবে, অর্থই তখন তোমার প্রধান হবে। আর যারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে, তাদের উদ্দেশ্যই হবে অর্থটা যাতে কয়েক গুণ হয়ে ফিরে আসে। এভাবে সমাজে অসুস্থতা বাড়বে। এটা নিম্নমানের ও নিম্ন রুচির প্রকাশ। এর দায় নিতে হবে কেন্দ্রীয় নেতাদের।

প্রশ্ন :

এ ধরনের ঘটনা রোধে ও টাকার যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন?

এ কে এম শাহনাওয়াজ: টাকার যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং দলের একটা বার্তা থাকা উচিত যে এটা হলে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা না হলে এটা চলতেই থাকবে এই নষ্ট সময়ে, নষ্ট সমাজে।