টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরসহ অনেক এলাকা প্লাবিত

সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটেগাছা এলাকা থই থই করছে পানি। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে তোলা ছবি
প্রথম আলো

তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়ির আঙিনায় পানি থইথই করছে। ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষ। একাকার হয়ে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর।

সরেজমিনে আজ শুক্রবার সকালে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, কুকরালি, বাঁকাল, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লাডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, রসুলপুর, রথখোলা, পুরোনো সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডিরডাঙ্গি ও কাটিয়া সব নিচু এলাকা পানির নিচে। নিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় পানি বের হতে পারছে না। ঘরে পানি না উঠলেও বাড়ির আঙিনায় পানিতে ডুবে রয়েছে। এসব বাড়ির মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। একাকার হয়ে গেছে মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে পুকুর ও আমন ধানের বীজতলা। সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালের দুই মুখ উঁচু থাকায় পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটেগাছা এলাকার বাসিন্দা আলীনুর খান বলেন, তাঁর বাড়িসহ এলাকার সব বাড়ির আঙিনায় পানি উঠেছে। এভাবে বৃষ্টি আরও একদিন হলে পানি বাড়িঘরে ঢুকে পড়লে তাঁদের অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। পৌরসভায় পানিনিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ–ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। গুটিকয় লোক ইটেগাছা এলাকায় অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।

মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। একাকার হয়ে গেছে মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে পুকুর ও আমন ধানের বীজতলা। সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালের দুই মুখ উঁচু থাকায় পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না।

বদ্দিপুর কলোনি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী লুৎফর রহমান বলেন, এলাকায় রাস্তাঘাটে হাঁটুসমান পানি। বাড়ির উঠানে পানি। কোথাও বের হওয়া যাচ্ছে না। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এসব পানি কবে সরবে তার ঠিক নেই। এখন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তাঁদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হবে। আবারও বৃষ্টি হলে তাঁদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের বিলগুলোতে রোপা আমনের খেত ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় পানি অপসারণের কোনো পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘর ছুঁই–ছুঁই অবস্থা। সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত না হওয়ায় প্লাবিত এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন বলে জানান ধুলিহর এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান, দীপংকর ঘোষ ও রমেছা বেগম।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে পৌরসভার ইটেগাছা এলাকায়
প্রথম আলো

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরার সদর উপজেলার গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, তালতালার বিল, রাজনগরের বিল, আগড়াখোলা বিল, কচুয়ার বিল, চেলারবিল, পালিচাঁদ বিল, বুড়ামারা বিল, হাজিখালী বিল, আমোদখালী বিল, বল্লীর বিল, মাছখোলার বিল ২০টি বিল গত তিন দিনের অতিবৃষ্টিতে ডুবে একাকার হয়ে গেছে। এসব বিলে থাকা মাছের ঘের থেকে মাছ বের হয়ে চাষিদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মমতাজ আহমেদ আরও জানান, বেতনা নদীতীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে যেতে না পেরে ঢুকছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার ভেতর। ফলে পৌরসভার নিম্নাঞ্চলসহ বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। মাছের ঘেরের পাশাপাশি সবজিখেত তলিয়ে গেছে পানিতে। আমনের বীজতলাও ডুবে আছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, অতিবৃষ্টিতে উপজেলার বিরাট অংশ তলিয়ে গেছে। তবে পানি সরে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। এরপরও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে পাঠানোর জন্য তাঁদের বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ বলেন, মৌসুমের প্রথম বড় ধরনের বৃষ্টিতে পানিনিষ্কাশন না হতে পেরে কয়েকটি এলাকা তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো কালভার্ট বা ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে পানি সরতে পারছে না, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।