টিউশনিতে চলা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছেন

>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

২০২০ সালের বছরের শুরুতেই নতুন নতুন টিউশনি খুঁজে জীবিকা নির্বাহ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা কেমন আছেন এই করোনাকালের লকডাউনে?

এই তো গত মার্চেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকেল পাঁচটার বাসে ভিড় পড়ে যেত শহরে পড়াতে যাওয়া নিয়ে। অনেক সিনিয়রকে দাঁড়িয়ে ঝুলে যেতে হতো সিট না পেয়ে। জেলা শহর থেকে দূরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের টিউশনি করানোর গল্পটা এমনই। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়েও পড়াতে হয়। আবার হলে বা মেসে ফিরে আসতে হয়। সন্ধ্যার টিউশনি করিয়ে কেউ মার্কেট ট্রিপে ৮টার বাসে বা দুটি টিউশনি করিয়ে ৯টার লাইব্রেরি ট্রিপের বাসে হলে ফিরে শুরু হতো রাতে দুটো খাবারের চেষ্টা। কেউ গেটের টংদোকান থেকে যত কম খরচে পারত একপেট খেয়ে হলে ফিরত। আবার কেউ দুটো রান্না করে খাবে বলে মেহেদীর দোকান থেকে ৫০ টাকা বা তার কমে খিচুরির বাজার করে হলে ফিরতে। তারপরের গল্পটা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সবারই জানা।

এমন করে প্রতিটি দিন পার করেন সেসব শিক্ষার্থী মাসের শেষে শূন্য পকেটে অপেক্ষা করেন কবে টিউশনির টাকাটা পাবেন। প্রায়ই দেখা যায়, দেরি করেই টাকা হাতে আসে। ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোটগুলো যখন পকেটে করে ফিরে, তখন খুব অনুভূতি কাজ করে, টাকা দিয়ে এটা–ওটা করার। কিন্তু সেটি কল্পনাতেই থেকে যায়। ছোট ভাইকে খরচ দিতে হবে। ছোট ভাইয়ের আগেই অনেক ভাউচার দেওয়া থাকে। প্র্যাকটিক্যাল খাতা কিনতে হবে, কখনো ট্যুরে যেতে তার চাঁদা দিতে হবে, তার মেসে থাকা ও খাবারের খরচ ইত্যাদি। অনেকের ছোট বোনের খরচ দিতে হয়। তা ছাড়া নিজের দোকানের বাকিগুলো পরিশোধ করতে হবে। অনেকের প্রতি মাসে পরিবারে টাকা দিতে হয়। বাবা–মা অপেক্ষায় থাকেন কবে সন্তান টাকা পাঠাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁদের টিউশনি করে পরিবারকে টাকা দিতে প্রতি মাসে। এসবের মধ্য হারিয়ে যায় সেই পকেটভরা টাকার অনুভূতিগুলো।

বুঝতেই পারলাম না কোথা থেকে কী হয়ে গেল। তিন মাসের বেশি সময়ে ধরে বাসায়। করোনা নামক মহামারি দিয়ে আত্মরক্ষার জন্য সবাই গৃহবন্দী। তবে এই সব শিক্ষার্থী কী করছেন এই লকডাউনে? কী করে চলছে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ? তাঁদের ভাইবোন ও পরিবারের মানুষগুলো কেমন আছে, এই লকডাউনে?

করোনার এই সময়ে অনেকেই হয়তো নানাভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বা বিভিন্ন মানসিক বা শারীরিক চাপে থাকছেন।

অপেক্ষা করছি সব ঠিক হয়ে যাওয়ার—প্রিয় মুখগুলোকে দেখার। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটার বাসে ঝুলে টিউশনিতে যাওয়ার, সবাই একসঙ্গে মিলে টংদোকানে বেলতলায় ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার পরিচিত কণ্ঠস্বরগুলো কানে আসার। সেটি শোনার সৌভাগ্য হবে কি না, জানি না। তবে শুধু অপেক্ষা করছি, যেখানে সবাই মিলে সুন্দর আগামীর পথে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারব, অপেক্ষা সুস্থ সেই পৃথিবীর জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টার, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।