টিকা পেতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে

খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গড়পাড়ার শুভ্র সেন্টার, সদর উপজেলা, মানিকগঞ্জ, ৭ মে
ছবি: প্রথম আলো

‘দেশে করোনাভাইরাসের টিকা আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। দেশে এখনো কিছু টিকা মজুত আছে। ভারত থেকে তিন কোটি টিকা আনতে চাহিদাপত্র (অর্ডার) দেওয়া হয়েছিল। ভারত আমাদের ৭০ লাখ টিকা দিয়েছে। আর ৩০ লাখ টিকা আমাদের উপহার দিয়েছিল। এরপর আর টিকা পাওয়া যায়নি। ফলে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। টিকা পেতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে। তাদের সঙ্গে চিঠিপত্র আদান–প্রদান হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই টিকা পাওয়া যেতে পারে।’

শুক্রবার বিকেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকায় শুভ্র সেন্টার আয়োজিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবং করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার দুস্থ পরিবারের মধ্যে ওই খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের অবস্থা দেখলে গা শিউরে ওঠে। লাশের পাশে আরেক লাশ সৎকার করা হচ্ছে। একটু অক্সিজেন পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে। কিন্তু অক্সিজেন পাচ্ছে না, করোনায় আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এই করোনায় ভারতে প্রতিদিন চার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এই অবস্থা যেন আমাদের দেশে না আসে। তাহলে আমাদের দেশের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। মানুষের জীবনের ক্ষতি, অর্থাৎ মৃত্যু হবে। আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত এক বছর করোনা মোকাবিলায় আছি। করোনা এমন একটি ভাইরাস, যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তা আমাদের জানা ছিল না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কীভাবে চিকিৎসা দিতে হবে, তা জানা ছিল না। আমরা ধীরে ধীরে তা আয়ত্ত করেছি। চিকিৎসক ও নার্সরা প্রশিক্ষিত হয়েছেন। বিশ্ব থেকে বিভিন্ন চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। আমরা সেগুলো গ্রহণ ও তা ব্যবস্থা করেছি।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। তবে আবার বেড়ে গেছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দেশে মাত্র দুই হাজার শয্যা ছিল। এখন শুধু ঢাকা শহরেই আছে আট হাজার শয্যা। সারা দেশে এখন ১২ থেকে ১৩ হাজার শয্যা আছে। গত এক বছরে ১৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় এখন ১৬ হাজার শয্যা আছে। এসব শয্যায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়ার পরে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরুতে একটি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করা হয়। এখন প্রায় ৪০০ ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কখনো ওষুধের অভাব হয়নি। অক্সিজেনেরও অভাব এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। যখন দ্বিতীয় ঢেউ এল, তখন ভারত থেকে অক্সিজেন আনা হয়। এখন দেশে প্রতিদিন ৭০-৮০ টন অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ৬০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। দেশে প্রতিদিন ২০০ টন অক্সিজেন উৎপাদিত হয়। বর্তমানে ৯০০ টন অক্সিজেন মজুত রয়েছে। আগামী এক মাসে আরও ৪০ টন অক্সিজেন যুক্ত হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে আগামীতে দেশে অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘লকডাউন দেওয়ায় করোনায় আক্রান্তের হার ২৩ থেকে ৮-এ নেমে এসেছে। মৃত্যু যেখানে ১১২ ছিল, সেখানে তা ৫০-এ নেমে এসেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়তে সময় লাগবে না। ঈদে আমরা সন্তানদের আনন্দের জন্য জামাকাপড় কিনতে বিপণিবিতানে যাই। কিন্তু পরিবারের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনলে সেই আনন্দ থাকবে না, পুরো পরিবার শোক বয়ে বেড়াবে। অনেকে শিশুদের নিয়ে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন, এটা ঠিক নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করতে হবে। ফেরিতে যেখানে ১০০ মানুষ ওঠার কথা, তবে সেখানে দুই হাজার মানুষ উঠছেন। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে করোনা বাড়তে সময় লাগবে না। ঈদ আনন্দের বদলে দুঃখ বয়ে আনুক, এটা কারও কাম্য নয়।’

টিকা নিলে করোনায় আক্রান্ত হবে না, এটা ভুল ধারণা বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, টিকা নিলেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এমন অনেকে আছেন, যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে টিকা নিলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে, মৃত্যুর ঝুঁকি কমে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার লকডাউন দিয়েছে। করোনার এই মহামারি সারা পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের কারণে অনেকে কষ্টে আছে, অনেকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো সবারই দায়িত্ব। সরকার অসহায় মানুষের সহায়তায় হাজার হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। সারা দেশে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করছে।

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার রিফাত রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মজিদ, মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র রমজান আলী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার প্রমুখ।