টেকনাফে জেলেপল্লির ১০০ পরিবার পেল প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী

প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্রসহায়তা নিতে আসা ঘূণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলো। শনিবার দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেপল্লির ১০০ পরিবারকে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জড়ো হওয়া মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে চাল, আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও মাস্ক।

প্রথম আলোর টেকনাফ প্রতিনিধি অতিথিদের নিয়ে এসব খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শাহপরীর দ্বীপের প্রবীণ শিক্ষক জাহিদ হোসেন, শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরু, দৈনিক কালের কণ্ঠের টেকনাফ প্রতিনিধি জাকারিয়া আলফাজ, দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার টেকনাফ প্রতিনিধি জসিম মাহমুদ ও মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য আবদুল গফুর প্রমুখ।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নাফ নদীর তীরঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া। এটি একটি জেলেপল্লি। এখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ নাফ নদীর বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করে আসছিল। এলাকার অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা মাছ ধরা। তবে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে এ জেলেপল্লির বাসিন্দাদের বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে তাই প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে তুলে দেওয়া হয়েছে খাদ্যসামগ্রীর একটি করে প্যাকেট।

ঘূণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলোর হাতে প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে। শনিবার দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছিলেন দিল কায়েস (৩৫) নামের জেলেপল্লির এক নারী। পঙ্গুত্ব বরণ করা স্বামী, বৃদ্ধ শ্বশুর, ননদ, তিন ছেলে-মেয়েসহ সাত সদস্যের সংসার তাঁর। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামতের কোনো সামর্থ্য নেই, নেই কোনো জমিও। পাউবোর খাসজমিতে নাফ নদীর তীরে কোনোভাবে জীবন যাপন করছেন। খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট পেয়ে তিনি বলেন, ‘সংসারে খাবারের খুবই সংকট চলছিল। কেউ তো আমাদের খবর নিল না। ঠিক তখনই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আমাদের জেলে পরিবারগুলোর জন্য খাবার দেওয়া হয়েছে। অন্তত কয়েক দিন ভালোভাবে দুই বেলা ভাত খেতে পারবে পরিবার-পরিজন।’

একই এলাকার গৃহবধূ জুলেখা বেগম (৬৫) বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি সবকিছু ভেঙে গেছে। জোয়ারের ঢেউ এখন ঘরের কাছাকাছি চলে এসেছে। বর্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এর মধ্যে প্রথম আলো খাদ্যসামগ্রী দেওয়ায় আমার মতো জেলেপল্লির অন্যান্য অসহায় মানুষের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে।’

জেলে আবদুল গফুর (৪২) বলেন, ‘জেলেপল্লির খবর কেউ না রাখলেও প্রথম আলো রেখেছে। এত দিনেও আমরা কোনো সরকারি সাহায্য–সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু আজ প্রথম আলো আমাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছে। এ জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন জেলে পরিবারের সদস্যরা। শনিবার দুপুরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরু বলেন, ‘নাফ নদীর তীরে এই জেলেপল্লির জন্য প্রথম আলোর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জেলেরা কোনো ত্রাণসহায়তা পাননি। এর মধ্যে গত ২০ মে থেকে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরকারি তালিকাভুক্ত এ জেলেপল্লিতে কোনো ধরনের খাদ্যসহায়তা কেউ পায়নি।’

খাদ্যসহায়তা বিতরণকালে উপস্থিত টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শাহপরীর দ্বীপের প্রবীণ শিক্ষক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত শাহপরীর দ্বীপের এই জেলেপল্লিতে ১০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই প্রথম আলো ট্রাস্টকে। সমাজের প্রত্যেক বিত্তশালী ব্যক্তি ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এভাবে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।