ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে সঙ্গে নিয়ে কিশোরকে হত্যা

উজ্জ্বল মিয়া
সংগৃহীত

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্কুল বন্ধ। শ্রমজীবী বাবার কাজও হয়েছে সংকুচিত। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে জাফলংয়ে ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফারের কাজ করছিল স্কুলছাত্র উজ্জ্বল মিয়া (১৩)। রোববার সকালে পর্যটকের ছদ্মবেশে দুর্বৃত্তরা তাকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যায়। আর দুপুরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। পরে সে মারা যায়।

আজ বিকেলে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন বোরহান (৩৫), উলিউর রহমান (১৯), এরশান (২২) ও খসরু মিয়া (১৮)।

নিহত উজ্জ্বল মিয়া জাফলং আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠশ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবার নাম আবদুস সাত্তার। তিনি পেশায় পাথরশ্রমিক। সিলেটের জাফলংয়ের রসুনপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি।

উজ্জ্বলের সহকর্মীরা বলেন, উজ্জ্বলের পিঠে ছুরির ২৩টি আঘাত পাওয়া গেছে। নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করে ক্যামেরা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয় ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রোববার ভোরে দুই যুবক উজ্জ্বলকে মায়াবী ঝরনা এলাকায় নিয়ে যান ছবি তোলার জন্য। সকাল গড়িয়ে দুপুর পার হলেও উজ্জ্বল আসছিল না। উজ্জ্বলের সহকর্মীরা মায়াবী ঝরনা এলাকায় গিয়ে তাকে ছুরিকাহত অবস্থায় পান। অবচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

উজ্জ্বলের বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, করোনার কারণে তিনি প্রায় কর্মহীন। ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফার হিসেবে তাঁর ছেলের রোজগারে সংসার চলত। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিরীহ মানুষ। স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেটা ফটো তোলার পেশায় নামছিল। কী দোষে ছুরি দিয়া ফালা ফালা করে ছেলেটারে মারল?’

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, মায়াবী ঝরনা এলাকার যে স্থান থেকে উজ্জ্বলকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি নির্জন। উজ্জ্বলের ব্যবহৃত ক্যামেরা ও মুঠোফোন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ক্যামেরা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়েছে।

১৫ জুলাই জাফলংয়ের গ্রিন পার্কে ট্যুরিস্ট গাইড ও ফটোগ্রাফার সাদ্দাম হোসেনকে (৩০) একই কায়দায় হত্যা করে ক্যামেরা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেন ওই দুজন। চক্রটি উজ্জ্বল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।