ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখার লক্ষ্য ছিল পুলিশ, ধারণা এসপির

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে রাখা বোমাটি রোবটের সহায়তায় নিষ্ক্রিয় করে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নাশকতা সৃষ্টি করতে পারলে আলোচিত হবে—সেই পরিকল্পনা থেকে দুষ্কৃতকারী বা জঙ্গিগোষ্ঠী বোমাটি সেখানে রেখে থাকতে পারে। ওই দুষ্কৃতকারী বা জঙ্গিগোষ্ঠীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।

এদিকে পুলিশ বক্সের সামনে থেকে বোমা উদ্ধারের পর সেটি নিষ্ক্রিয় করার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে সেখানে রিমোট কন্ট্রোলচালিত শক্তিশালী বোমাটি রেখেছিল, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে এসপি বলেন, ইতিমধ্যে মহাসড়কের আশপাশের সিসি ক্যামেরার কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিএমপির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে, তারাও বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা এ ঘটনায় কাজ করছে।

সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে কে বা কারা প্লাস্টিকের ব্যাগে করে বোমা রেখে যায়। সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিনে দেখা গেছে, আট লেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বাস-বের অংশে (গাড়ি থামার সড়ক) দুটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। একটি ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শকের এবং অপরটি ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের বসার জন্য। সোমবার বিকেলে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টদের বসার জন্য পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগে বোমাটি রাখা ছিল।
আট লেন মহাসড়কের অংশের ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী খুঁটিতে দুই দিকে দুটি সিসি ক্যামেরা লাগানো দেখা গেছে। তবে যে অংশে বোমা পাওয়া গেছে, সেই অংশে কোনো ক্যামেরা লাগানো নেই। ফলে কে বা কারা সেখানে বোমাটি নিয়ে রেখেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। মঙ্গলবারও প্রতিদিনের মতো সেখানে গাড়ি থামছে, পথচারীসহ বিভিন্ন যাত্রী ওই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছে।

ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সঙ্গে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার। সেখানকার ব্যবস্থাপক মো. রাসেল বলেন, লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ আছে। তিনি প্রতিদিন একবার এসে অফিস খুলে নতুন কোনো নির্দেশনা আছে কি না, সেটি অনলাইনে চেক করে দেখেন। সন্ধ্যার কিছু আগে তিনি এসে দেখেন, ওই এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। পরে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করে। যখন বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তখন থেকেই ভয় পেয়ে গেছেন। এখনো ভয় করছে।

স্থানীয় শরবত বিক্রেতা আলম মিয়া বলেন, ‘পুলিশ বক্স যখন ঘিরে রাখে, তখনই ভেবেছি সেখানে কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু বোমা বিস্ফোরণের পর বুঝতে পারি, সেখানে শক্তিশালী বোমা রাখা হয়েছিল। বোমাটি বিস্ফোরিত হয়ে পুলিশসহ অনেকের প্রাণহানি হতে পারত।’

সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে কে বা কারা প্লাস্টিকের ব্যাগে করে বোমা রেখে যায়। গতকাল সোমবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. আসিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে দায়িত্ব পালনকালে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এক ব্যক্তি প্লাস্টিকের ব্যাগ পড়ে থাকার বিষয়টি জানান। তিনি কাছে গিয়ে দেখতে পান, ব্যাগের ওপর একটি ঝুটের কাপড় রাখা। ব্যাগের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই সেখানে দেখতে পান, ম্যাচ লাইটারে গ্যাস ভরার মতো কয়েকটি বোতলের সঙ্গে স্কচটেপ মোড়ানো এবং তার প্যাঁচানো। তিনি বোমাসদৃশ বস্তু দেখতে পেয়ে ট্রাফিক বক্সের ভেতর থেকে সবাইকে সরিয়ে দেন এবং বিষয়টি পুলিশ কন্ট্রোল রুমকে জানান।

সোমবার বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর বোমাসদৃশ বস্তু দেখে মহাসড়কের ওই অংশ ঘিরে রাখে পুলিশ। খবর পেয়ে ডিএমপির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে বস্তুটিকে রিমোট কন্ট্রোলচালিত বোমা বলে নিশ্চিত করে। পরে রোবট দিয়ে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বোমাটিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বোমাটি বিস্ফোরণের সময় ৩০ মিটারের ভেতরে কোনো স্থাপনা বা মানুষ থাকলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটতে পারত।

আরও পড়ুন