ঠাকুরগাঁওয়ে ঢিলেঢালা লকডাউন, জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি

লকডাউন কার্যকর করতে শহরে চলাচল করা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন পুলিশ সদস্যরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের চৌরাস্তা এলাকায়
ছবি: মজিবর রহমান খান

ঠাকুরগাঁওয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে, বাড়ছে মৃত্যুও। সংক্রমণ ঠেকাতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের লকডাউন চলছে। লকডাউনের বিধি অনুযায়ী, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও জরুরি সেবা ছাড়া গণপরিবহন, বিপণিবিতান ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা। দোকানপাট বন্ধ রাখা ছাড়া জনজীবনে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে, লকডাউন চললেও জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে শহরের প্রচার চালানো হচ্ছে। অনেকেই চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানেন না। তাঁরা বিভিন্ন কাজে রাস্তায় নেমেছেন। কাল (শুক্রবার) থেকে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সড়কে চলাচল করা লোকজনের সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

হুটহাট করে লাকডাউন দিলে কেউ তা মানবে না। করোনা রোধ করতে লকডাউন কোনো সমাধান নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়।
আবুল হোসেন, ব্যবসায়ী

আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তা, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, কালীবাড়ি ও বিভিন্ন শাখা সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কগুলো কার্যত ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে। এসব যানবাহনের চলাচল ঠেকাতে পুলিশ সদস্যদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে বাঁশ বেঁধে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে বাধার দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। অন্যান্য দিনের মতোই লোকজনকে ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও উদাসীনতা লক্ষ করা যায়।

শহরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, লকডাউন চলার কথা তিনি শুনেছেন। কিন্তু সবাই বাইরে ইচ্ছেমতো চলাফেরা করছে। বাজারঘাটেও আগের মতো মানুষ আসছে। তাই তাঁরাও ইজিবাইক চালাচ্ছেন। শুধু শহরের চৌরাস্তা আর বাসস্ট্যান্ডে গেলেই পুলিশ আটকাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও শহরের সড়কে বাঁশ বেঁধে যান চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: মজিবর রহমান খান
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৬০০টি নমুনা পরীক্ষার ১৮৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, হুটহাট করে লাকডাউন দিলে কেউ তা মানবে না। করোনা রোধ করতে লকডাউন কোনো সমাধান নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়।

লকডাউন দিলে দেওয়ার মতো দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলী আক্কাস। তিনি বলেন, শ্রমজীবী মানুষের কথা ভাবতে হবে। ব্যাংক, অফিস, আদালত চালু রেখে লকডাউনের কোনো মানে হয় না।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৬০০টি নমুনা পরীক্ষার ১৮৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। নতুন শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২৬ জন, পীরগঞ্জে ২০, বালিয়াডাঙ্গীতে ১৯, রানীশংকৈলে ১৭ ও হরিপুর উপজেলায় ৬ জন রয়েছেন। এ সময়ে করোনা তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত তিনজনের মধ্যে সদর উপজেলার ৮০ বছর বয়সী এক পুরুষ, পীরগঞ্জের ৭০ বছর বয়সী এক নারী ও রানীশংকৈলের ৬০ বছর বয়সী এক নারী রয়েছেন।

লকডাউন কার্যকর করতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরাও সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
মাহবুবুর রহমান, জেলা প্রশাসক

আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরাও সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।

শহরের রিকশাচালক হাফিজুর রহমান বলেন, লকডাউনে তাঁদের মতো গরিবের কষ্ট এ ছাড়া আর কী? এক দিন রিকশা না চালালে তাঁদের পেটে ভাত যায় না। সেটা না ভেবে লকডাউন দিলেই কি মানুষ ঘরে বসে থাকবে?