সেই শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছে, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই

ঠাকুরগাঁও থেকে রিকশায় নিয়ে আসা অসুস্থ সেই শিশুটির আজ পেটে অস্ত্রোপচার হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট–অপারেটিভ ওয়ার্ডে মায়ের সঙ্গে আছে শিশুটি
প্রথম আলো

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেই শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছে। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় অস্ত্রোপচার করেন হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার উপেন্দ্রনাথ রায়। পেটের মধ্যে নাড়ি পেঁচিয়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হয় বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

সাত মাসের শিশুসন্তানকে বাঁচাতে বাবা তারেক ইসলাম নিজেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে ১১০ কিলোমিটার পথ ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। এতে সময় লেগেছে প্রায় নয় ঘণ্টা। ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে শিশুটিকে নিয়ে আসার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়। সেই সঙ্গে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনভিত্তিক পোর্টালে খবরটি গুরুত্বসহকারে প্রচার পাওয়ায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সুপারশপ, ব্যক্তি এবং রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

সাত মাসের শিশুসন্তানকে বাঁচাতে বাবা তারেক ইসলাম নিজেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে ১১০ কিলোমিটার পথ ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। এতে সময় লেগেছে প্রায় নয় ঘণ্টা।

শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক সহকারী রেজিস্ট্রার উপেন্দ্রনাথ রায় আজ দুপুরে শিশুটির জরুরি অস্ত্রোপচারের পর প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির পেটে একটির ভেতর আরেকটি নাড়ি ঢুকে পেঁচিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর এটি নিশ্চিত হওয়ায় আজ শিশুটির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। শিশুটি এখন ভালো রয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরও পড়ুন

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক তারেক ইসলাম ও স্ত্রী সুলতানা বেগমের অভাব-অনটনের সংসার। রোজগারের একমাত্র সম্বল একটি চার্জার রিকশা। এরই মধ্যে সাত মাসের শিশুসন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রথমে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। কিন্তু এত দূরের পথ কীভাবে যাবেন? হাতে কোনো টাকা নেই যে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করবেন। তার ওপর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ।

অস্ত্রোপচারের পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট–অপারেটিভ ওয়ার্ডে মায়ের সঙ্গে আছে শিশুটি। বাইরে থেকে জানালা দিয়ে সন্তানকে দেখার চেষ্টা করছেন বাবা তারেক ইসলাম
প্রথম আলো

রিকশাচালক বাবা তারেক ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত মাস বয়সী শিশু জান্নাত রক্ত পায়খানা করায় গত ১৩ এপ্রিল রাতে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে চিকিৎসা চলা অবস্থায় পরদিন ১৪ এপ্রিল চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে রেফার করেন। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিই, নিজেই রিকশা চালিয়ে রংপুরে যাব। গত শনিবার সকাল ছয়টায় ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর দীর্ঘ ১১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বেলা তিনটায় রংপুরে পৌঁছাই।’

আমার এই অসহায়ত্বের খবর সাংবাদিকেরা প্রচার করায় রংপুর নগরে অবস্থিত স্বপ্ন নামের সুপারশপ প্রতিষ্ঠানটি শিশুটির চিকিৎসাসেবার জন্য যাবতীয় ব্যয়ভার নিয়েছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত চার লাখ টাকার মতো আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। যার এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। এই টাকা বাচ্চার ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে জমা রাখব।
তারেক ইসলাম, শিশুটির বাবা

তারেক ইসলাম সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমার এই অসহায়ত্বের খবর সাংবাদিকেরা প্রচার করায় রংপুর নগরে অবস্থিত স্বপ্ন নামের সুপারশপ প্রতিষ্ঠানটি শিশুটির চিকিৎসাসেবার জন্য যাবতীয় ব্যয়ভার নিয়েছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত চার লাখ টাকার মতো আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। যার এক টাকাও খরচ করতে হয়নি।’ এই টাকা বাচ্চার ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে জমা রাখবেন বলে তিনি জানান।

স্বপ্ন সুপারশপের অপারেশন ম্যানেজার ফয়সাল শামস বলেন, ‘শিশুটির চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব ধরনের চিকিৎসা ব্যয় আমাদের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। শিশুটি সুস্থ হওয়ার পর ঠাকুরগাঁওয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে যা যা করণীয়, সবটুকুই আমরা করব।’

তারেক ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের রামবাবুর গোডাউন এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে। সংসার জীবনে তাঁর নয় বছর ও তিন বছর বয়সী আরও দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে।