ঠিকাদারের সাশ্রয়ে সরকারি টাকা গচ্চা

সম্প্রসারণকাজের জন্য অন্য এলাকা থেকে মাটি আনার চুক্তি হয় ঠিকাদার ও সওজের। টাকা সাশ্রয় করতে সড়কের পাশ থেকেই মাটি তুলছেন ঠিকাদার।

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের দুই পাশ থেকে মাটি তোলা হচ্ছে। গর্ত হওয়ায় বর্ষায় সম্প্রসারিত অংশ ধসে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি সিংড়ার ডাল সড়ক এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বাইরে থেকে মাটি এনে সড়ক সম্প্রসারণ করার চুক্তি করেছেন ঠিকাদার। এ জন্য ঠিকাদারকে দেওয়া হবে ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু ঠিকাদার খননযন্ত্র দিয়ে মহাসড়কের পাশ থেকেই মাটি তুলে সড়ক সম্প্রসারণ করছেন। এতে সরকারের অর্থ গচ্চা যাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সড়ক সম্প্রসারণের খরচও দ্বিগুণ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ ঘটনা ঘটেছে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সম্প্রসারণের কাজে। অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঠিকাদার টাকা নেওয়ার পরও এভাবে কাজ করছেন। তবে সওজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, অনিয়ম বন্ধ করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর ঠিকাদার বলেছেন, ভুল করে কিছু জায়গা থেকে মাটি তোলা হয়েছে।

সওজের নাটোর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর-বগুড়া (এন-৫০২) মহাসড়কের সম্প্রসারণকাজের অংশ হিসেবে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় থেকে ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার চার লেন ও পরে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার ৩৪ ফুট প্রশস্তকরণের কাজের জন্য একটি গুচ্ছ (প্যাকেজ) দরপত্র আহ্বান করা হয়। নাটোরের মীর হাবিবুল আলম ও ঢাকার রানা বিল্ডার্স যৌথভাবে ৮১ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় কাজটি বাস্তবায়ন করতে চুক্তিবদ্ধ হয়। ঠিকাদারকে এই টাকার মধ্যে ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দেওয়া হবে বাইরে থেকে মাটি এনে সড়ক সম্প্রসারণ করার জন্য। এ জন্য ঠিকাদারকে ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধও করা হয়েছে।

■ অন্য এলাকা থেকে মাটি এনে কাজ করার জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার চুক্তি করেছে সওজ। ■ ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে রাস্তার মাটি তুলে রাস্তাতেই ফেলা হচ্ছে।

তবে ঠিকাদার নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া থেকে সিংড়া উপজেলার বন্দর এলাকার মধ্যে প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশের সম্প্রসারণে সড়কের উভয় পাশ থেকে মাটি তুলেছেন। এসব জমি সওজের মালিকানাধীন। বাইরে থেকে প্রতি সিএফটি মাটি আনতে যেখানে খরচ হতো তিন শর বেশি টাকা, সেখানে সড়কের উভয় পাশ থেকে মাটি তুলতে খরচ হচ্ছে মাত্র ২০ টাকা। এতে ঠিকাদারের টাকা সাশ্রয় হলেও সরকারকে ঠিকই চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া সড়কের দুই পাশে গর্ত তৈরি হওয়ায় বৃষ্টিতে মূল সড়ক ধসে গেলে তা সংস্কার করতে আবার গর্ত ভরাটের কাজ করতে হবে।

গত বুধবার দুপুরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, ফুলবাগান এলাকায় সওজের কার্যালয়ের উত্তরে ঠিকাদার সড়কের পাশের মাটি তুলে সড়ক সম্প্রসারণ করেছেন। কিছু জমি বাদ রেখে দিঘাপতিয়া কালভার্টের পর থেকে আবার মাটি তোলা হচ্ছে।

দিঘাপতিয়া এলাকায় অটোচালক ফরহাদ হোসেন বলেন, ঠিকাদারের লোকজন প্রায় ১৫ দিন ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে রাস্তার মাটি তুলে রাস্তাতেই ফেলছেন। সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তাদের সামনে এভাবে দিনের পর দিন মাটি কাটা হয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) নাটোর শাখার সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, অতিরিক্ত লাভের আশায় ঠিকাদার এই অনিয়ম করেছেন। তবে এ অনিয়মের জন্য সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ প্রকল্পের সবাই দায়ী। কারণ, ঠিকাদার এ অনিয়ম এক দিনে করেননি। দীর্ঘদিন ধরে কয়েক কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। এ ঘটনা সওজের দৃষ্টি এড়াতে পারে না।

এ বিষয়ে গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় সওজের নাটোর কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহিমের সঙ্গে। তিনি প্রথমে বলেন, এটা অনিয়ম নয়। তাঁদের কথামতোই ঠিকাদার মাটি তুলেছেন। তবে পরদিন আবার বলেন, গত ১৪ মার্চ ঠিকাদারকে সড়কের পাশে থেকে মাটি তুলতে নিষেধ করে চিঠি দেওয়া হয়। এরপরও যদি মাটি তোলা হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২৫ মার্চ প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে কার্যালয়ে আসেন ঠিকাদার মীর হাবিবুল আলম। তিনি বলেন, সব জায়গায় মাটি তোলা হয়নি। ভুল করে কিছু জায়গা থেকে মাটি তোলা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মো. শাহ রিয়াজ বলেন, নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক সম্প্রসারণে অনিয়মের বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছে। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।