ডাকাতি ও জিম্মি করে টাকা আদায় চক্রের চারজন গ্রেপ্তার

ঢাকার গাবতলী থেকে পাবনা পর্যন্ত মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়িতে (প্রাইভেট কারে) যাত্রী তুলে তাঁদের সব কিছু কেড়ে নেওয়া হতো। পরে ওই যাত্রীদের জিম্মি করে স্বজনদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করে নিত একটি চক্র। ওই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেপ্তার চারজনকেই আদালতে হাজির করা হয়। তাঁরা এই কায়দায় মহাসড়কে ডাকাতি করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেনÑনেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের সোহেল রানা (৩৬), ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা গ্রামের মো. মিজান (৩৩), মানিকগঞ্জের দৌতলপুর উপজেলার বাসাইল উত্তরপাড়া গ্রামের সাবাস (৩২) ও নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বান্নানাল গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৩২)। তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার, লুণ্ঠিত টাকা ও মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।


আজ বুধবার দুপুরে পিবিআই টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান।

মোহাম্মদ সিরাজ আমীন আরও বলেন, ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মাহতাব হোসেন নামের এক ব্যক্তি সদর উপজেলার করটিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে পাবনায় বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে বাসের অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় একটি ব্যক্তিগত গাড়ি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। তাঁরা যাত্রী বহন করবে বললে মাহতাব ১৫০ টাকা ভাড়ায় পাবনা যাওয়ার জন্য ওই প্রাইভেট কারে ওঠেন। এ সময় আরও দুই যাত্রীবেশী ডাকাত সদস্যকে ওই গাড়িতে তোলা হয়। পরে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে নির্জন স্থানে পৌঁছালে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীবেশী ডাকাত দলের সদস্যরা মাহতাবের হাত–পা কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরে তাঁর দেহ তল্লাশি করে দুটি মুঠোফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেন। পরে তাঁরা মাহতাবকে হত্যার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আরও ২৪ হাজার টাকা এনে হাতিয়ে নেন।

একই কায়দায় ২৪ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠিয়ে মারধরসহ হত্যা করার ভয় দেখিয়ে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের পরিদর্শক বেলাল হোসেনের কাছ থেকে নগদ ৪৪ হাজার টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে আরও ২০ হাজার টাকা নিয়ে তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যান তাঁরা। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে এসব ঘটনায় জড়িত থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মিরপুর, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ডাকাতির এসব ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন ও আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হন। পরে আজ আদালতে হাজির করা হলে তাঁরা জবানবন্দি দেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন কুমার কর্মকার ও মো. আরিফুল ইসলাম তাঁদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

জবানবন্দিতে তাঁরা জানান, তাঁরা মাসোহারা চুক্তিকে গাড়ি ভাড়া করে মহাসড়কে যাত্রী নেওয়ার নামে ডাকাতি করে আসছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধ দেলদুয়ার ও সদর থানায় পৃথক মামলা করা হয়েছে।