ডাকাতির মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে ওসিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এক সন্ধ্যায় যথাসময়ে দোকান বন্ধ না করায় আরও কয়েকজনের সঙ্গে আতিক (২২) নামের এক তরুণকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে দুই লাখ টাকা চাওয়া হয়। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হলেও ৫০ হাজার টাকা নিয়েও ওই তরুণকে ছাড়েনি পুলিশ। বাকি টাকা দিতে না পারায় একটি ডাকাতির মামলায় তাঁর নাম জুড়ে দেওয়া হয়—এমন অভিযোগ এনে আজ রোববার দুপুরে আতিকের বাবা মামলা করেন। আসামি করা হয় ওসিসহ তিনজনকে।


মামলার বিবরণ অনুযায়ী গত ২১ জুন নরসিংদী শহরে ঘটনাটি ঘটে।

আতিকের বাবা হুমায়ুন কবির মুন্সী জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আজ মামলাটি করেন। আদালত র‍্যাবকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় আসামিরা হলেন নরসিংদী মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান, এই থানারই উপপরিদর্শক নঈমুল মোস্তাক ও পুলিশের স্থানীয় সোর্স সবুজ মিয়া। সৈয়দুজ্জামান বর্তমানে মাধবদী থানার ওসি হিসেবে কর্মরত।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, নরসিংদী শহরের বটতলা বাজারে মামলার বাদীর ফার্নিচারের দোকান আছে। গত ২১ জুন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ওই দোকানে ছেলে আতিককে বসিয়ে বাইরে যান হুমায়ুন। কিছুক্ষণ পরই পুলিশ এসে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ না করার অজুহাতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে আতিককে ধরে নিয়ে যায়। তাঁকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় গেলে জানা যায়, পুলিশ তাঁকে এরই মধ্যে নির্যাতন করেছে।

এলাকার লোকজনকে নিয়ে থানায় গেলে হুমায়ুন কবির মুন্সীর কাছে দুই লাখ টাকা চাওয়া হয়। পুলিশের হাতে-পায়ে ধরেও কাজ হয়নি। ৫০ হাজার টাকা নিয়েও আতিককে ছাড়েনি। পরদিন একটি ডাকাতির মামলায় তাঁকে চালান করে দেওয়া হয়। ১৭ দিন জেল খেটে জামিনে বের হয় সে। সম্প্রতি ওই ডাকাতির মামলার অভিযোগপত্রেও তাঁর নাম দেওয়া হয়। তাই ওসি, এসআই ও পুলিশের সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন হুমায়ুন কবির মুন্সী।

মামলার বাদী হুমায়ুন কবির মুন্সী বলেন, ‘ছেলেকে ডাকাতির মামলা থেকে ছাড়িয়ে আনতে আমি এলাকার মানুষের গণস্বাক্ষর নিয়েছিলাম ডিসি-এসপির কাছে দেওয়ার জন্য। পরে খবর পেয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা আমার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলায় তা জমা দিইনি। অথচ ওই ডাকাতির মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও আমার ছেলের নাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হবে এবং আমার ছেলেকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেন এই তিন আসামি।’

মামলার বিষয়টি শুনেছেন উল্লেখ করে সৈয়দুজ্জামান বলেন, ‘আমি বাদী হুমায়ুন কবির মুন্সীকে চিনি না। শুনেছি একজন আসামিকে নাকি ডাকাতির মামলায় অন্তর্ভুক্ত করায় এই মামলা হয়েছে। আমার ধারণা, তিনি আমাকে দেখলে চিনবেনও না।’ তিনি আরও জানান, টাকা লেনদেনের বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয়। কেন তিনি এমন একটি মামলা করতে গেলেন, সেটাই বুঝতে পারছি না।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান জানান, নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. রকিবুল ইসলাম র‍্যাব-১১–কে এ বিষয়ে তদন্ত করে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।